দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অপপ্রচা‌রে বি‌দে‌শি বন্ধুরা যা‌তে বিভ্রান্ত না হয়‌ সে‌দি‌কে খেয়াল রে‌খে স‌ঠিক তথ্য তু‌লে ধর‌তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দে‌শে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত‌দের প্র‌তি আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সফরকালীন আবাসস্থল রোমের পারকো ডেই প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলব, এই যে অপপ্রচারগুলো হয় সঙ্গে সঙ্গে মূল তথ্যগুলো রাষ্ট্রদূতদের জানানো উচিত। এটা কিন্তু আপনারা জানাবেন। তাহলে এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেখানে আছে, সেখানে আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। অপপ্রচারের কারণে অনেক সময় বিদেশিরা বিভ্রান্ত হয় বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, কিছু লোক যারা বিভিন্ন কারণে—দুর্নীতির কারণে বা অপরাধ করে চাকরি হারিয়েছে, দেশ-বিদেশে তারা এখন বসে আছে, আমি জানি না এত অর্থ তারা কোথা থেকে পায়। তারা বসে বসে সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে।

তিনি বলেন, খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন অতি চেনা পরিচিত কিছু মুখ। প্রত্যেকটা জায়গায় তারা মিথ্যা অপপ্রচার দেয়।

নির্বাচন আসলে দুই-একটা দেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, অপপ্রচারে অনেক সময় বিদেশিরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। আর দুই একটা দেশ তো আছেই প্রত্যেক নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে কীভাবে সরাবে সেদিকে ব্যস্ত এবং তাদের কাছে আমাদের মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়; যারা ওই খুনিদের আশ্রয় দেয়; অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নিয়েও ওঠা বসা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আসে ওই যারা অগ্নিসন্ত্রাসের আসামি, তাদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত। কিন্তু যে ভিকটিম, স্বজন হারা বা যে পুড়ে গেছে তাদের নিয়ে তাদের চিন্তা নাই। এই এক অদ্ভুত ব্যাপার বাংলাদেশে দেখি।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো যাদের দিয়ে সন্ত্রাস ঠেকাই, জঙ্গিবাদ ঠেকাই তাদের ওপরে যদি স্যাংশন দেয়; এরা তো মনোবল হারিয়ে ফেলে। এটি মানুষকে আরও বেশি উৎসাহিত করে, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করলাম, জঙ্গিবাদ দমন করলাম তাদের ওপর একটা স্যাংশন বসায়ে দিলো। এটা কীসের জন্য করল? আর যারা লঙ্ঘনকারীদের জন্য কান্নাকাটি; এই যে দ্বৈততা, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক। বিশ্বব্যাপী এই দ্বৈততাই চলছে।

এসময় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

মানবাধিকার বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, মানবাধিকার যদি সংরক্ষণ করে থাকে সেটা আওয়ামী লীগই করে। আর যারা এখন মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার তারা তো মানুষ খুন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছে, গ্রেনেড হামলা করেছে, ১৫ আগস্ট জাতির পিতা ও তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে। এখন হয়তো মানবাধিকার নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসে। যারা আমার বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়, পরিবার-পরিজনকে গুলি করে হত্যা করেছে, সেই খুনিরা তো সেই দেশে বহাল তবিয়তে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাদের ফেরত দেয় না। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের প্রটেকশন (সুরক্ষা) দেওয়া, আর যারা মানবাধিকার সংরক্ষণ করে তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া, এটা একটা খেলা আমি দেখতে পাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যদি আমরা মানবাধিকারে বিশ্বাসই না করতাম, আমাদের যদি সেই মানবিক দিকগুলো না থাকতো, এই যে রোহিঙ্গাদের আমরা যে আশ্রয় দিয়েছি, প্রথম কয়েকটা মাস তো আমাদের নিজের টাকায় তাদের সম্পূর্ণ দেখতে হয়েছে।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। এই দূত সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত ১৫ জন রাষ্ট্রদূত অংশ নেন।