দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে আবারও মাঠে নামছে বিএনপি। আগামী শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল করবে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ওই দিন দুপুর ২টায় রাজধানীর দুটি স্থান থেকে পৃথকভাবে এ গণমিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থানের পর যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নতুন এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন দলের হাইকমান্ড।

এদিকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’-এর এক দফা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে যুগপৎ সংশ্লিষ্ট সমমনা সব দলের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।

ঢাকায় বিগত ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগের দুই-তিন দিনের ঘটনাগুলো তৈরি হওয়ার পেছনে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অতি আবেগের প্রতিফলন দেখা গেছে, যা দায়িত্বশীলরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। একইভাবে গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতেও সমন্বয়হীনতার ছাপ ছিল। নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। যদিও অবস্থান কর্মসূচিতে শীর্ষ নেতাদের ওপর পুলিশের হামলা হওয়া সাংগঠনিক দুর্বলতা ব্যাপকভাবে ফুটে উঠেনি বলে দলটির স্থায়ী কমিটির নেতারা গত সোমবার রাতের বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমসহ দেশের মানুষের কাছে গয়েশ্বর রায়ের ওপর হামলার ঘটনাটি ফোকাস হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ফোকাস হয়নি।

এক দফা দাবি আদায়ে ঢাকায় গত ২৮ জুলাই মহাসমাবেশের পরদিন রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দেয় বিএনপি। বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, ঢাকার প্রবেশপথের প্রতিটি পয়েন্টে ২৫-৩০ হাজার নেতাকর্মী জড়ো হওয়া সম্ভব ছিল। কারণ, ২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ ঘিরে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। আর প্রতিটি পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হলে পুলিশ এমন মারমুখী ভূমিকায় যেতে পারত না। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। আন্দোলনের গতিপথও পাল্টে যেত। বিএনপির পরিকল্পনা ছিল, ঢাকায় অবস্থানরত নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করে ঢাকাকেন্দ্রিক ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছানো। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনযায়ী, নেতাকর্মীরা বেশ কিছু দিন ঢাকায় অবস্থানের প্রস্তুতি নিয়ে মহাসমাবেশে এসেছিলেন।

জানা গেছে, অবস্থান কর্মসূচির পর সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সাথে কথা বলেছে বিএনপির হাইকমান্ড। আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচিতে যাতে কোনো ব্যত্যয় না ঘটে সে অনুযায়ী সবাইকে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত না হওয়ায় ১২ দিন বিরতি দিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন আবার শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ঢাকা মহানগরীতে আগামী ১১ আগস্ট শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে শুধু রাজধানীতে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর বাইরে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়া এবং দেশের কোথাও কোথাও বন্যা হওয়াতে ঢাকার বাইরে কর্মসূচি রাখা হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এক দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।

স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিণী ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায় প্রদানে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। নেতারা বলেছেন, বর্তমান অবৈধ সরকার, বিচার বিভাগকে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শাসনকে স্থায়ী করার লক্ষ্যে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। বিচার বিভাগের সব স্তরগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দুদক ও দলীয় পুলিশ কর্তৃক দায়ের কৃত মিথ্যা মামলার বেআইনি ফরমায়েসি রায়, নি¤œ আদালতের স্বেচ্ছাচারিতা, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্ছিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন দমন করার জন্য ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।