দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য আমদানি বেড়েছে। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর বন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি তলানিতে ঠেকেছে। বাণিজ্যভিত্তিক এ বন্দর দিয়ে একমাত্র রপ্তানি খাতেই বছরে কোটি কোটি ডলার আয় করা সম্ভব বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে ডলার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

 

যে পরিমাণ পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়, তার থেকে অনেক কম পরিমাণ ভারতে রপ্তানি হয়। হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন বন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা। যদি বন্দরের ভেতরে রাস্তাঘাট, পণ্য আনলোডের শেডের ব্যবস্থা বৃদ্ধি করে তাহলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, চালসহ সবধরনের পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। বিপরীতে রপ্তানি হয় রাইস ব্রান অয়েল, ঝুট কাপড় এবং ওয়াটার পাম্প, কলা, পেঁয়াজের ফুলকা, পাটের বস্তা, আলুসহ কয়েকটি পণ্য। এসব পণ্যের ভারতীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৭০৫ টন বিভিন্ন পণ্য, যা থেকে বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৪২ কোটি ৯২ লাখ।অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ টন পণ্য, যা থেকে বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব আদায় করেছে ৩৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় ৩১২ কোটি ২২ লাখ। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ১০১ কোটি রাজস্ব আদায় করতে পারেনি হিলি স্থল শুল্ক স্টেশন।

হিলি সি অ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, হিলি পানামা পোর্ট লিংকের ভেতরে অবকাঠামো যেমনটি থাকার কথা তেমনটি নেই। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করার কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বাধা এবং রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের সমস্যা। এ ছাড়াও পোর্টের ভেতরের যে পরিমাণ শেডের প্রয়োজন, সেই পরিমাণ শেডও নেই। পোর্টের ভেতরের রাস্তারও বেহাল দশা। আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা যদি সমস্যাগুলো সমাধান করে তাহলে আমদানি বৃদ্ধিসহ সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

হিলি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দরটি ২২ একর জায়গার ওপরে স্থাপিত। ভারত থেকে প্রায় সবধরনের পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। আমাদের পানামা পোর্টের অবকাঠামোর কোনো সমস্যা নেই। সেই সঙ্গে লোকবলেরও কোনো সংকট নেই। আমাদের চারটি বড় বড় শেড রয়েছে। এরমধ্যে দুটি শেডে ১২ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা এবং অপর দুটি শেডে আট হাজার টনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়াও তিনটি ওয়েট স্কেল আছে। এরমধ্যে দুটি ১০০ টনের এবং একটি ৬০ টনের। বর্ষার সময় যেন ভারত থেকে আসা পণ্যগুলো সঠিক সময়ে আনলোড করা যায়, সেই জন্য দুটি ওপেনিয়ার শেডের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। একটিতে সেখানে একসঙ্গে ১৬টি ট্রাক এবং অন্যটিতে ছয়টি ট্রাক আনলোড করা যায়। পানামা পোর্টের চাহিদার তুলনায় বেশি লোকবল রয়েছে। সবসময় নিরাপত্তার জন্য ৬০ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। সেই সঙ্গে ৪৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশিদ হারুন বলেন, কিছু সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না। সমস্যাগুলোর সমাধান করা গেলে মাসে কোটি কোটি ডলারের পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব। ভারতের ওপারে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা না থাকায় পণ্য রপ্তানির পরে ছাড় করতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ কারণেই মূলত বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার বায়জিদ হোসেন বলেন, সম্প্রতি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সে তুলনায় রপ্তানি অনেকাংশে কম। রপ্তানি বৃদ্ধি করতে আমরা উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি। আশা করছি, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। সেই সঙ্গে হিলি স্থলবন্দরের রাস্তার সমস্যাও সমাধান হয়েছে। এখন আমদানি আগের থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি হবে। সরকারের দেওয়া রাজস্বের লক্ষমাত্রাও আমরা পূরণ করতে পারব।