জমি বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশে কার্যকর হওয়া নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী এখন থেকে জমি বিক্রি করে পাওয়া লাভ বা মুনাফা করদাতার আয়ের সঙ্গে যোগ হবে। সেইসঙ্গে করদাতা ব্যক্তিকে এ আয়ের ওপর কর দিতে হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছরের বেশি সময় আগে ক্রয় করা জমি বিক্রি থেকে এ ধরণের মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স হিসেবে পরিচিত। জমিটি পাঁচ বছরের কম সময় আগে কেনা হয়ে থাকলে তার উপর সাধারণ হারে কর দিতে হবে। একইসঙ্গে কেউ যদি কাউকে জমি হেবা বা দান করে দেয় বা অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করে পাঁচ বছরের মধ্যে আবার নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে সেই জমি বিক্রি করে, তাহলে তাকেও ওই মুনাফার ওপর কর দিতে হবে। যদিও এই কর নির্ধারণের সময় বিক্রেতা জমি ক্রয়ের সময় উৎসে যে কর দিয়েছিলেন সে অংশটুকু বাদ দিয়ে হিসেব করা হবে। এতদিন ওই উৎস-করকেই বিক্রেতার জন্য চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
আয়কর বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সাব্বির আহমেদ বলছেন বিক্রেতার জন্য জন্য আগেও কর নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে জমি ক্রয় বিক্রয়ের সময় বিক্রেতার ওই কর ক্রেতা পরিশোধ করে আসার একটি প্রচলন চলে আসছিল এবং উৎসে কর্তিত করকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিধান ছিল বলে বিক্রেতাকে আর নতুন করে কোনো কর দিতে হত না। এখন ক্রেতাকে তার জন্য নির্ধারিত কর যেমন দিতে হবে, তেমনি বিক্রেতাকেও তার জমি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত লাভের ওপর কর দিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যক্তি যদি এক কোটি টাকা দিয়ে কোনো জমি ক্রয় করেন এবং এখন বিক্রি করেন দুই কোটি টাকায়, তাহলে গেইন ট্যাক্স অনুযায়ী তাকে এক কোটি টাকা লাভের হিসেবে কর দিতে হবে ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু তিনি ক্রয়ের সময় রেজিস্ট্রেশনের জন্য উৎসে কর দিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। ফলে কার্যত এখন তাকে বাকী পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে।
আয়কর আইন বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলছেন, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আগে থেকেই আছে, তবে আগে এটাই ছিল চূড়ান্ত কর। এখন নতুন আইনে এটি হয়ে গেছে ন্যূনতম কর।
অনেক বছর আগে (যেমন ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি আমলে) কেনা জমি বংশ পরম্পরায় কেউ পেয়ে এখন বিক্রি করলে, তার ক্ষেত্রে মুনাফা কীভাবে নির্ধারিত হবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে।
সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘জমির দলিলে একটা মূল্য থাকবে সেটা ব্রিটিশ আমল হোক আর পাকিস্তান আমল হোক। সুতরাং সেই সময়ের ক্রয়মূল্য আর এখনকার বিক্রয়মূল্যের পার্থক্যও বের করা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো দাদা জমিটা যেই দামে কিনেছেন, সেটা নাতি বা তার সন্তান বিক্রি করতে গেলে তাদের জন্যও সেটা ক্রয়মূল্য হিসেবে প্রযোজ্য হবে কি না- এসব প্রশ্নের সদুত্তর দরকার।’
নতুন আইন অনুসারে, জমি বিক্রির লাভ মুলধনি আয় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এ ধরনের আয়কে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। একটি হলো জমি ক্রয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে বিক্রি করলে ব্যক্তির আয় অনুযায়ী নির্ধারিত হারে কর দিতে হবে। আর অন্যটি হলো ক্রয়ের পাঁচ বছর পর বিক্রি করলে ১৫ শতাংশ হারে গেইন ট্যাক্স প্রদান করতে হবে।
আগের আইনে ছয়টি খাতে উৎস-করকেই চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর মধ্যে ছিলো জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া অর্থ, সঞ্চয়পত্রের সুদ, রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা, এমপিওভুক্ত স্কুলের এফডিআর, জমি বিক্রয় ও জমি ডেভেলপারদের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সাইনিং মানি। এখন নতুন আইন অনুসারে এসব খাতের আয় মূলধনি আয় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এই আয়ের জন্যে কর দিতে হবে। সূত্র: বিবিসি
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম