পেট্রোবাংলার অপরিশোধিত এলএনজি আমদানির বিলের ৬৫ শতাংশই জনতা ব্যাংকের
আমীর হামজা,দ্য রিপোর্ট: বেসরকারী সহ তিনটি ব্যাংকের কাছে সরকারের অপরিশোধিত এলএনজি আমদানির বিল পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৯৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে পেট্রোবাংলার মোট অপরিশোধিত এলএনজি আমদানির বিল এর ৬৫ শতাংশই জনতা ব্যাংকের ।
অন্যদিকে পেট্রোবাংলার কাছে এলএনজি আমদানির জন্য তহবিল হাতে আছে মাত্র ৭১৫ কোটি ৯ লাখ টাকা । অর্থাৎ পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানির জন্য মোট তহবিল ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৯৮১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।পেট্রোবাংলা সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পেমেন্ট-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে এলএনজি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে দেশের গ্যাস সরবরাহ নেটওয়ার্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প কার্যক্রম ও গ্যাসের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার।পেট্রোবাংলা সুত্র জানিয়েছে বিদ্যুৎ,সার কারখানা, আবাসিক, পরিবহন খাতে ব্যবহারের কারণে দেশে গ্যাসের মজুদও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কর্মকর্তাদের আশঙ্কা বড় ধরনের মজুদ পাওয়া না গেলে আগামী আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে দেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। বাংলাদেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় চারশো কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে সরকার এখন পর্যন্ত দৈনিক সরবরাহ করে ৩০০ কোটি ঘনফুট।অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন , দেশের একটি ব্যাংক থেকে এভাবে এলএনজি আমদানি বিল না দিলে ব্যাংকটি আর্থিক ভাবে মারাত্বব ক্ষতির সম্মূখীন হবে। পেট্রোবাংলাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনতা ব্যাংকের এলএনজি আমদানি করার ঋণ পরিশোধ করতে হবে ।
পেট্রোবাংলা সূত্রে আরো জানা যায়, এলএনজি সরবরাহকারী ও স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদনকারী আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন পড়েছে, সেই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ক্রড তেল আমদানির বিল নিষ্পত্তি করতে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি) থেকে বাড়তি ৯০০ মিলিয়ান ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ । সংস্থাটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ১ দশমিক ৪ বিলিয়ান ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে ।
এভাবে জ্বালানি তেল কেনার বৈদেশিক ঋণে মার্কিন ডলারের চাপ কমাতে পারলে এলএনজি আমদানির অর্থ যোগান দেওয়া যাবে ।জনতা ব্যাংকের অপরিশোধিত এলএনজি বিলের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৭৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা । পেট্রোবাংলার জনতা ব্যাংকের এলএনজির আমদানির তহবিলের ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গত সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।বেসরকারী আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের পেট্রোবাংলার অপরিশোধিত এলএনজি বিলের পরিমাণ হচ্ছে ১৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ।
অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখা এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখার মোট অপরিশোধিত এলএনজি আমদানি বিল ৭৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা । পেন্ট্রো বাংলার অগ্রণী ব্যাংকের কাছে এলএনজি আমদানির তহবিলের ঘাটতি রয়েছে ৪৬৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ।এর মধ্যে ভর্তূকির পাওয়া গেছে ২ হাজার ৩৪৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা । চলতি বছর আগাষ্ট মাস পর্ষন্ত দেশে আমদানিকৃত এলএনজি বিক্রি করে পেট্রোবাংলা বিল পেয়েছে ৫ হাজার ২১৬ কোটি টাকা । এ সময়ে সংস্থাটি মোট আয় হয়েছে ৭ হাজার ৮৩৮ কোটি ১ লাখ টাকা আর এলএনজি আমদানি করতে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ।