দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বকে দেখাতে সরকার দেশে জঙ্গি নাটক করছে’ এই বক্তব্যকে দেশবাসীর সঙ্গে উপহাস বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপির কাছে জঙ্গি দমনের চেষ্টাকে নাটক মনে হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ বিএনপির মদদেই পরিচালিত হচ্ছে জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেটওয়ার্ক। আজকে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন ও শান্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিগোষ্ঠীকে উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে সেই উচ্চারণেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

তিনি বলেন, বিএনপির সহায়তা, প্রত্যক্ষ মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটে। বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য। জঙ্গি নেতা শায়েখ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই তাণ্ডব দেখিয়েছিল গোটা দেশে। তখন বিএনপি নেতারা বলেছিলেন ‘বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি’। অথচ পরে প্রমাণিত হয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তৎকালীন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি এবং জঙ্গি সংগঠনের বিকাশ ঘটেছিল। রাজশাহীতে প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছিল বাংলা ভাইয়ের জঙ্গিবাহিনী। জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে বিএনপির তৎকালীন মন্ত্রী, এমপিদের প্রকাশ্য বৈঠকের ছবি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও জঙ্গিবাদের বিষবৃক্ষ রোপণ করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে চারা রোপণ করেছিলেন, খালেদা জিয়ার শাসনামলে ব্যাপক বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে তা মহীরুহে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রশিদ-ফারুকরা মধ্যপ্রাচ্যের উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহযোগিতায় ‘ফ্রিডম পার্টি’ নামে একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠন গড়ে তোলে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টিকে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দেন। জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বিএনপি শাসনামলে ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। এই অপশক্তি যশোরের উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, খুলনার আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলের কাছে ও হেলিপ্যাডে বোমা পুঁতে রাখা, রমনার বটমূলে হামলা, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে গির্জায় হামলা ও নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলাসহ একাধিক জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি মুফতি হান্নানসহ একাধিক জঙ্গি নেতার আদালতে দেওয়া জবানবন্দি এবং সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় তারেক রহমানই ছিল এই গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড। এ ঘটনায় নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন। বিএনপি, জামায়াত, বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র, দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্মিলিত ষড়যন্ত্রেই এই হামলা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের হামলা থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীও রেহাই পাননি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জেএমবি ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ২৬টি হামলা চালায়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা, ময়মনসিংহে ফাইলা পাগলার মাজার ও ময়মনসিংহের ৩টি সিনেমা হলে বোমা হামলা এবং গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থানে ১৭ আগস্টের পর অসংখ্য আত্মঘাতী হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত হন, আহত হন ৪ শতাধিক। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে দুই বিচারককে হত্যা করে জঙ্গিরা।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারক ও বাহক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হয়। উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। স্বাধীনতাবিরোধী এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দ্বারা আওয়ামী লীগ বারবার আক্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী এই উগ্র-সাম্প্রদারিক জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলায় নিহত হয়েছে।