দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রতিনিয়ত মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে মানুষ। আর মৃতদের তথ্য বিশ্লেষণে পুরুষরা আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যুতে নারীর হার বেশি দেখা গেছে।

 

সরকারের হিসাব বলছে, চলতি বছর দেশে মশাবাহিত এ ভাইরাসটি যত মানুষের প্রাণ কেড়েছে, তাদের ৫৭ শতাংশই নারী। কিন্তু নারীদের মৃত্যুর হার বেশি কেন, তার জবাব নেই সরকারের কাছে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করেন, লিঙ্গ বৈষম্যের কারণেই নারীদের প্রাণহানির হার বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৬৩০ জনের। এর মধ্যে নারী ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫১৪ জন। এর মধ্যে ২৯৫ জনই নারী। শতকরা হিসাবে ৫৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীর ক্ষেত্রে অপুষ্টি ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এ কারণে যেকোনো ভাইরাল ইনফেকশনে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। আর গর্ভবতী ও ঋতুস্রাবকালীন শারীরিক দুর্বলতাও একটি অন্যতম কারণ। এ ছাড়া নারীর মধ্যে দ্রুত চিকিৎসাসেবা নেওয়ার প্রবণতা কমের পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে রয়েছে উদাসীনতা। আবার বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি অবহেলার কারণে দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নারীর মৃত্যু বেশি। চিকিৎসক, গবেষক, রোগী ও পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যে এমন চিত্রই মিলেছে।

ডেঙ্গুতে নারীর মৃত্যু বেশি হলেও আক্রান্তের হার পুরুষের বেশি। স্ত্রী মশার পেটে যখন ডিম আসে তখন সেটির প্রধান খাদ্য রক্ত। আর এই সময়টায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ স্ত্রী মশার শিকার হয় বেশি। অনেক কারণে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষকে বেশি কামড়ায় মশা। এই বয়সী পুরুষের বিপাক প্রক্রিয়া অন্য বয়সী পুরুষের তুলনায় দ্রুত হয়। এ ছাড়া পুরুষ নড়াচড়া বেশি করায় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ঘাম তৈরি হয়ে দেহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। মশা কার্বন ডাই-অক্সাইডে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষকে বেশি কামড়ায়। আবার নানা কাজে পুরুষকে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। এসব কারণেও মশার কামড় ও মশাবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি পুরুষের বেশি।

এদিকে গতকাল সকাল ৮টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন দুই হাজার ২০১ জন। একই সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয় আটজনের, যাদের সাতজনই নারী।

ডেঙ্গুতে নারীর মৃত্যুহার বেশি হলেও এখন পর্যন্ত তার কারণ নির্ণয়ে গবেষণার কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)। গবেষণা হয়নি বেসরকারি পর্যায়েও।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক লিয়াকত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের তথ্যে ব্যাপক গলদ রয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে হলে তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে। কিন্তু এতে যে ধরনের তথ্যউপাত্ত থাকা দরকার, সেটি নেই। নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতাল ছাড়া সারাদেশের চিত্র আমরা পাচ্ছি না। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল ও বাসায় যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের তথ্য বাইরে থাকছে। প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। সেগুলো না পেলে কী কারণে নারীদের মৃত্যুহা