নবরাজ’র নিরবধি রহস্যের চিত্রপট
রেজাউর রহমান
আমাদের থামতে হবে এবং যথেষ্ট পরিমাণে নম্র হতে হবে, আমাদের বুঝতে হবে যে রহস্য বলতে কিছু আছে, ছিল, থাকবে। আমাদের জীবনের শুরুটা যেমন রহস্য, তেমনি শেষটাও এক রহস্যের সঙ্গী অর্থাৎ জীবকুলের জন্য রহস্য অবিচ্ছেদ্য অংশ যা কিনা সর্বকুলচিত্তবদ্ধ নয়।
চিত্ত যখন পরিশ্রমী ঠিক তখনই প্রতিফলিত করে নানা অনুষঙ্গের মাধ্যমে, হতে পারে লেখায়, সুরে, চিত্রে, স্থাপনায় হতে পারে অন্য কোন সৃষ্টির মাধ্যমে।
এমনই চিত্তশ্রমী চিত্রকর নবরাজ রায়, পটে প্রতিফলনের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টায় রত। নবরাজ তরুণ কিন্তু উদঘাটনের চেষ্টা প্রবীনসম। শিল্পশিক্ষা শেষ করে ক্ষান্ত নন তরুণ এই শিল্পী, একটা অনুসন্ধানী মন নিয়ে নানা পথের সন্ধান করে বেড়াচ্ছে তা বোঝা যায় তার চিত্র কর্ম দেখে। "Chronology of Art history " আমাদের জানাই মানব সভ্যতার সংগ্রামের ইতিহাস একমাত্র চিত্রকলা দিয়েই পেয়ে থাকি আমরা। নবরাজ অজন্তা ইলোরা’র গুহা থেকে কিংবা তাজমহল দেখে তার রহস্য পাঁচ বাই চার ফিট্ বা দশ বাই পাঁচ ইঞ্চির ভেতর এনে প্রতিফলিত করছে। অন্তর্গত যায়গা থেকে শিল্পী নিজেকে সবার আগে প্রতিফলিত করতে চায়। তবে চিত্রকলার ফেলুদা হতে চায় হিমালয়সমচিত্ত ও অনুসন্ধানী মনে।
নবরাজের চিত্রে প্রস্তর পাথরের গন্ধ, আবার মনে হয় এই বুঝি হিমালয়ের চুড়ায় কোন শেরপার পায়ের নিচে চূর্ণ করা বরফকুচির হিমবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। কখনো কল্পিত কখনো নিজেকে উপস্থিত করা য়ায় চিত্রপটে। শিল্পী তরুণ কিন্তু চিত্রভাষা পোক্ত। বিমূর্তধারায় শুরু তবে তা অনন্তের। রহস্য যেমন অনন্ত তেমনি বিমূর্ত প্রতিফলিত রূপও অসীম। নবরাজ কি কোন নিদিষ্ট বার্তা চিত্রের মাধ্যমে দিচ্ছে যা রহস্যময়, নাকি শিল্পকে প্রতিফলিত করছে এমন কিছু যা পটে রচিত হয়েছে। বিমূর্ততা এক মায়া জালের মূর্তরূপ, ফর্ম, স্পেস, বা বর্ণের ব্যবহারও রহস্যময় নবরাজ। চিত্রে কখনও আলতামিরা, অজান্তা কখনো বা সদ্য চমকপ্রদ বর্ণের আধিক্য, সবটা মিলিয়ে অন্তহীন এক রহস্যের চিত্রকলা নিয়ে হাজির নবরাজ শিল্প-সমঝদারদের মাঝে। রহস্য থাকবে বলে সভ্যতা সংস্কৃতি এগিয়েছে এবং আরও অগ্রসর হবে ঠিক তেমনি নবরাজের চিত্রে ফেলুদামন এবং তা অনন্তগামী।