আমির হামজা, দ্য রিপোর্ট: বোতলজাত খাবার পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন । ব্যস্ততার কারণে নগর জীবনে পানির চাহিদা পূরণে বাইরে বের হলে অনেকেই বোতলজাত পানি পান করেন। যে কারণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় বোতলজাত পানির। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে প্রথমে দু-একটি কোম্পানি বোতলজাত পানির দাম বাড়িয়ে দেয়। পরে প্রায় সব কোম্পানি তাদের পানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।বাজারে আধা লিটারের বোতলজাত পানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি । 

কিন্তু কয়েক মাস আগে আধা লিটাররের এক বোতল পানির দাম ছিল ১৫ টাকা , এখন সেটা ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে । পাশাপাশি এক লিটার, দেড় লিটার, দুই লিটার, পাঁচ লিটারের পানির বোতলের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা করে।গত সপ্তাহে সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমান সদস্য( জনপ্রশাসন , অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ) বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সিনিয়ার বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে কমিশনের মাঠ পর্ষায়ের প্রতিবেদন পাঠিয়ে ব্রান্ড কোম্পানির বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে ।

প্রতিযোগীতা কমিশন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বোতলজাত খাবার পানির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্বির বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে অবহিত হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের একটি বাজার মনিটরিং টিম অগাষ্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা মহানগরীর একাধিক বাজার পরিদর্শন করে । পরিদর্শনকালে দেখা যায় , সাম্প্রতিককালে দেশে বোতলজাত খাবার পানির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্বি পেয়েছে ।

পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক প্রতিযোগীতা কমিশন বলছে বর্তমানে বাজারে যে সব বোতরজাত পানি বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে কিনলে আকোয়ফিনা , মাম , ফ্রেশ , পুষ্টি ,জীবন ব্রান্ডের ৫০০ মি লি পানির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১৫ টাকা । এছাড়া প্রতি ৫০০ মি লি বোতলজাত খাবার পানির পাইকারি মূল্য ১১-১২ টাকা । অর্থাৎ ৫০০ মি লি পরিমানের প্রতি বোতল পানি খুচরা পর্যায়ে ৮/৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে – যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ।

গুলশান ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে আধা লিটার বোতলের পানি কেনা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হঠাৎ পানির দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা কিছুই বলতে পারছি না। কোম্পানি বাড়িয়ে দিল, আর আমরাও কিনে পান করতে বাধ্য হচ্ছি। অভিযোগ জানানোর মতো, প্রতিবাদ করার মতো কোনো জায়গা আমাদের নেই।আইনে যেটি বলা আছে, প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্য অনুমতি-সাপেক্ষে দাম বাড়াবে কোম্পানিগুলো। কিন্তু প্রতিযোগিতা কমিশনের মনিটরিং না থাকায় কোম্পানিগুলো হুট করে পানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে ব্যবসায়ীরাই নিজেদের মতো করে তাদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করছেন।

মাম পানির বিক্রয় ও বাজারজাতকরণের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বোতলজাত পানির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যে কারণে ক্রেতাপর্যায়ে পানির দাম বাড়াতে হয়েছে। আমাদের ট্যাক্স বেড়েছে; গ্যাস, বিদ্যুৎ ও প্লাস্টিকের দামও বেড়েছে। তাই কোম্পানি পানির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনা করতে দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় ছিল না।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, পানির দাম হঠাৎ বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। এটি আমাদেরও নজরে এসেছে। কিছু মার্কেট যাচাই করে তথ্য সংগ্রহ করছি। কত দাম ছিল, এখন সেই পানির বোতলের দাম কত, কারা কমিশন নেয়— বিষয়গুলো তদন্ত করে আমরা ভোক্তা অধিকারে চিঠি দিয়েছি। দাম অযৌক্তিক হলে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(দ্য রিপোর্ট/আহ হ/ মাহা/২ সেপ্টেবর,২০২৩)