দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ মামলার ব্যাপারে দূতাবাসের কাছে কোনো ‘তথ্য’ ও ‘পর্যবেক্ষণ’ থাকলে তা জানাতে বলেছে ডিবি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা এ বিষয়ে দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কার্যালয়ের সিনিয়র ফরেন সার্ভিস ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটর বরাবর গত বৃহস্পতিবার এ চিঠি পাঠানো হয়।

মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। আদালত মামলাটির অধিক তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। নৈশভোজ শেষে গাড়িতে ওঠার সময় তাঁর গাড়িতে হামলা হয়।

ডিবি থেকে দূতাবাসে পাঠানো চিঠিতে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, এই মামলায় ২০২১ সালের মার্চে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তাঁরা হলেন ফিরোজ মাহমুদ, নাইমুল ইসলাম, মীর আমজাদ হোসেন, সাজু ইসলাম, রাজীবুল ইসলাম, শহিদুল আলম খান, মোজাহিদ আজমি, সিয়াম এবং অলি আহমেদ। তবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, অভিযোগকারীসহ পাঁচজন এর আগে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে তিনজন আসামি হিসেবে বাদী বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর নাম উল্লেখ করেননি। তাই প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করতে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।

ডিবির সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা চিঠিতে জানান, আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশের পর তাঁকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়েছি, বাদী বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছি, সাক্ষ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি, তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ’

মার্শা বার্নিকাট ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মার্শা বার্নিকাটকে বহনকারী গাড়ির ওপর হামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছে একাধিকবার জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার এবং এ ব্যাপারে কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে তারা।

রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে সেই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্রও পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়, রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের সদস্যরা হামলাকারীদের মধ্যে দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। হামলার সময় ওই দুই ব্যক্তি চিৎকার করে বলছিলেন, বদিউল আলম সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত। হামলাকারীরা গাড়িবহরের দিকে এগোনোর সময় তাঁদের বাধা দেওয়া হলে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দলের দুই সদস্যকে ঘুষি মারেন হামলাকারীরা। গাড়িবহর চলে যাওয়ার সময় দুটি গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন হামলাকারীরা।

হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সে সময় বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বিবৃতি দেয়। এতে তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম