দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি বা দুটি নয়, তিনটি পরাশক্তির কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে এক পরাশক্তির কাছ থেকে সুবিধা পেতে গিয়ে অন্য পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের বড় ঝুঁকি আছে। তবে এটি বাংলাদেশের জন্য কোনো কিছু না পাওয়ার লড়াই নয়।

ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ভাবনা তুলে ধরেছেন কুগেলম্যান ছাড়াও আরও প্রায় ২০ জন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ। সেমিনারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিককে সামরিকীকরণ চায় না ঢাকা।

বিআইআইএসএস ও বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ (বিএফআরএস) যৌথভাবে ওই সেমিনার আয়োজন করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা মনে করি, সামরিক কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিকে কারো কিছু করা উচিত নয়। ’

সেমিনারে মূল বক্তা পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সবার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রেখেই ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি (ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক, সংক্ষেপে আইপিও) ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সবার ইন্দো-প্যাসিফিক পরিকল্পনাতেই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের আইপিও শুধু সমুদ্রকেন্দ্রিক নয়, এখানে স্থলভাগেরও গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বিভাজন সৃষ্টিকারী বা কাউকে বাদ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করতে পারে না। ’

সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা মানে নতুন কোনো সামরিক জোট বা বলয়ে ঢোকা নয়। ’ তিনি বলেন, ‘কানেক্টিভিটিতে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগগুলোর সঙ্গে আছে। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন নয়াদিল্লি সফরে জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় কানেক্টিভিটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে প্রতিবেশী ভারতের স্বার্থ তো আছেই। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র, ভারত-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ’

কুগেলম্যান বলেন, ‘এই অঞ্চলের কোনো দেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল হোক তা যুক্তরাষ্ট্র চায় না। যুক্তরাষ্ট্র নেপালকে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনে (এমসিসি) অন্তর্ভুক্ত করেছে। ’ যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এমসিসি ইন্দো-পলিসি নীতির অংশ। এর মাধ্যমে আসলে নেপালকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতার মধ্যে টেনে আনা হয়েছে।

মাইকেল কুগেলম্যান বড় শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মিয়ানমারের কাছে ভারতের অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলে চীনকে ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। ’

পাকিস্তানের ইমরান খানের উদাহরণ দিয়ে বিশ্লেষক কুগেলম্যান বলেন, ‘ইমরান খানের মস্কো সফর যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করেনি। এরপর টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। ’

গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজ বাংলাদেশ ও ভারত থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন কুগেলম্যান। তিনি বলেন, ‘চীন নিয়ে জোরালো অবস্থান নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ’

সেমিনারে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সালমান পারিসি ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আইওআরএ ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য তুলে ধরে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।