দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:  নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে কোন আলোচনা হয়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুক্ষণ একান্তে আলোচনা করেছেন, এই একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোন কথা হয়েছে কি-না তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন। জি-২০ তে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। গ্লোবাল সাউথের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে জি-২০-তে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদিও জি-২০তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার জন্য হাসিনাকে সাধুবাদ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেছেন, ভারত হলো বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার। ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধও তিনি মোদিকে করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈঠকে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সহযোগিতা, শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি নিয়ে তিন দফা সমঝোতা স্মরক সই হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে ভারতের সঙ্গে যেই সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়েছে তার ভেতর রয়েছে সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি, যা ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে ভারতের এনপিসিআই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে নেটওয়ার্ক-টু-নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে রুপি ও টাকা পারস্পরিক লেনদেন সহজ করার সমঝোতা হবে। আরেকটি সমঝোতা হয়েছে 'কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা' নিয়ে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা ধরে চলে দুই নেতার বৈঠক। বৈঠকের ঠিক পরপরই নরেন্দ্র মোদি এক টুইটে লেখেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই আনন্দদায়ক। আমাদের আলোচনায় এসেছে- কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযোগের মতো আরও অনেক ক্ষেত্রগুলো।

জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা জারদোশ।

এরপর সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন দুই নেতা। শেখ হাসিনার গাড়িবহর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান নরেন্দ্র মোদি।

এরপর শুরু হয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ অংশ নেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বৈঠক হওয়া নিয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আন্তরিকতার বার্তা দিতেই এই গৃহঅভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে।’

তিনদিনের এই সফরে, শনিবার সকালে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর দুপুরে সৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। এ ছাড়া আর্জেন্টিনা ও সাউথ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি। এছাড়া আরও কিছু কর্মসূচিতে ব্যাস্ত সময় কাটবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।