গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র্যাংকিং
ডি গ্রেডের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র্যাংকিংয়ে গভর্নর হিসেবে ‘D’ (ডি) গ্রেড পেয়েছেন।
এছাড়া সবকটি সূচকে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ পেয়েছেন A+ (এ প্লাস) গ্রেড। এছাড়া A- (এ মাইনাস) গ্রেড পেয়েছেন শ্রীলংকাকে দেউলিয়াত্ব ও ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহে। আর নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মহাপ্রসাদ অধিকারী পেয়েছেন ‘বি মাইনাস’ গ্রেড। মূল্যস্ফীতিসহ ভয়াবহ সংকটে থাকা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমদ পেয়েছেন ‘সি মাইনাস’।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গভর্নরদের গ্রেডিং করে আসছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন। সাময়িকীটির বার্ষিক প্রকাশনা হিসেবে নিয়মিতভাবে প্রকাশ হচ্ছে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড’। ১০১টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের মূল্যায়ন করা হয় পাঁচ শ্রেণীতে- A(এ), B(বি), C(সি), D(ডি) ও F(এফ)। এছাড়া পারফরম্যান্স মূল্যায়নে কমবেশির ভিত্তিতে এ, বি, সি ও ডি শ্রেণিকে আবার তিনটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন এ শ্রেণির গভর্নরদের A+ (এ প্লাস), A(এ) ও A- (এ মাইনাস) উপশ্রেণিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অকার্যকর ও চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হলে সেটির গভর্নরকে র্যাংকিংয়ে আনা হয়েছে F(এফ) গ্রেডের অধীনে। গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের বিশ্লেষণে গভর্নরদের মূল্যায়নের মাপকাঠি হিসেবে মোটাদাগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের সুরক্ষা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুসংহত করার মতো বিষয়গুলোর কথা উঠে এসেছে। গত এক বছরে এসব সূচকে অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। তবে অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের নিয়ন্ত্রণকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আবার মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশের লক্ষ্যকে ছাড়ালেও এ অতিরিক্ত হার সীমিত ছিল দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্টে। স্থিতিশীল ছিল টাকার বিনিময় হারও। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে টাকার অবমূল্যায়ন হয় সাড়ে ৯ শতাংশ। ডলার সংকটে হিমশিম খেতে থাকেন পণ্য আমদানিকারকরা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য ব্যাপক মাত্রায় বাড়তে থাকে। মূল্যস্ফীতিও হয়ে ওঠে লাগামহীন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা কমতে থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের কারণে মূল্যস্ফীতির মতো বাহ্যিক ধাক্কার মুখে নাজুক অবস্থানে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের বিগত বছরগুলোয় প্রকাশিত ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড’ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ১ মে থেকে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন ড. আতিউর রহমান। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ তিন বছর গভর্নর হিসেবে আতিউর রহমানের গ্রেড ছিল ‘সি’। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো তিনি ‘বি মাইনাস’ গ্রেডে উন্নীত হন। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পদত্যাগ করায় ওই বছর তার কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হয়নি।