"আমরা দঁড়ি ধরে টান মারব, হীরক রাজা থাকবে না"
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের শাসন আমলকে হীরক রাজার শাসন আমালের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে হীরক রাজার রাজত্বে পরিনত করা হয়েছে। হীরক রাজার প্রথম দিকটা ভালো হলেও সবশেষ কী ছিল? দঁড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান। এই দঁড়ি ধরে টান মারার সময় এসে গেছে। আমরা উদ্বীপ্ত এবং সংগঠিত। আমরা দঁড়ি ধরে টান কমারব, হীরক রাজা থাবে না।’
সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ একদফা দাবিতে খুলনা বিভাগের রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধনী সভায় আজ মঙ্গলবার মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকারের জন্য। কিন্তু কারো রাজত্ব কায়েম করতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই। কোনো রাজা-রানীর রাজত্ব কায়েম করতে নয়। হীরক রাজার রাজত্ব কায়েমের জন্য নয়।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই রোডমার্চ সকাল ৯টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখান থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে মোটর সাইকেলে করে এখানে এসেছি। মনে হচ্ছে, ঝিনাইদহে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, বিজয় উৎসব করছি। ঈদের আগের রাতের মতো চাঁদরাত পালন করছি। সারাদেশের মানুষ আজ উদ্বীপ্ত, আবেগতাড়িত, মনের বেদনায় অস্থির। একদিকে বিজয়ের আনন্দ, আরেক দিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা তার জন্য বেদনার্ত।’
সম্প্রতি রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন মির্জা আব্বাস। সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘ওনার সঙ্গে ৪০-৪৫ বছর ধরে রাজনীতি করি। উনার স্নেহ পেয়েছি, বহুবার সামনাসামনি কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু সেইদিন অন্যরকম দিন ছিল। আমি তার সামনে বসে আছি। আমি তাকিয়ে আছি। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাস করলাম ম্যাডাম কিছু বলবেন? জবাবে মাথা নাড়ল। কথাগুলো বললেন না। আমার চোখের দিকে তাকালেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি ভেবে নিয়েছি সেই চাহনীতে তার প্রশ্ন ছিল, তোমরা আমার জন্য কী করছ? আমি কি দেশের জন্য কিছুই করি নাই? আমি কি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিনি? আমি কি মানুষের কথা বলার অধিকার দেই নাই? আমি কি দেশের মানুষকে স্বাধীনতা দেই নাই? ওনার চোখ ছলছল করছিল, কথা বলতে পারেনি। ওনার শারীরিক অবস্থা ভালো না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি ম্যাডামকে বলতে চাই, সারাদেশবাসী আপনার জন্য চিন্তিত, সারাদেশবাসী আপনার জন্য দোয়া করছে, বাংলাদেশের জনগণ কখনো আপনাকে ভুলতে পারবে না। বাংলাদেশের জন্য আপনার যে অবদান, সেই অবদান বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। সেই অবস্থা শুরু হয়ে গেছে।’
দেশের অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপী ও অর্থ পাচার করে দেশকে দেউলিয়া বানিয়ে ফেলেছে এই সরকার। অন্যদিকে আমরা যারা প্রতিবাদ করি, আমরা যারা প্রতিবাদী, আমাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, বাঘের মুখে দিয়ে দেয় আর বাঘ আমাদের খেয়ে ফেলে অর্থাৎ পুলিশ গ্রেপ্তার করে, কোর্টে পাঠায়, আর কোর্ট আমাদেরকে জেলে দিয়ে দেয়। একটা স্বাধীন দেশের এই অবস্থা আর চলতে পারে না।’
দেশের ঋণ খেলাপীর চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ঋণ খেলাপী ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। আর আজকে ঋণ খেলাপী টাকার পরিমান একশ’ ৯ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা আপনার টাকা, আমার টাকা, আমাদের ট্যাক্সের টাকা, জনগণের টাকা। এই টাকা কোথায় গেলো জনগণ জানতে চায়, এই টাকা গেলো কোথায়, এই টাকা কে খাইল? আমরা দেখেছি পিকে হালদার ভারতে আছে, ৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। আমরা জানি, আরও অনেকে আছেনে, বলা যাবে না বিভিন্ন কারণে, তবে যখন সময় আসবে সমস্ত নাম প্রকাশ হয়ে যাবে।’