দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আমিতো আপনাকে ভালবাসি, আপনার কর্মকাণ্ড ও দলের সমালোচনা করি। আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু কবর দিয়ে গিয়েছিলেন। সেজন্য আমি আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। তবে বঙ্গবন্ধুকে ছাড়ি নাই। আজীবন বঙ্গবন্ধুকে আমার বুকে লালন করে যাব।

শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণফোরাম একাংশের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের বিষয়ে বঙ্গবীর বলেন, মুখে মুখে ঐক্য করবার চেষ্টা করলে হবে না। ঐক্যের জন্য তাগিদ থাকতে হবে। মাহমুদুর রহমান মান্না খুব ভাল বক্তৃতা করেন। আমি ওর কাছ দিয়েও যেতে পারি না। আমাদের আন্তরিকতা থাকতে হবে। ল্যাং মারা, কেনু মারার স্বভাব থাকলে হবে না। একাজ সবার আগে বিএনপিকে করতে হবে। মানুষ আমাদেরকে যতখানি বিশ্বাস করে তার অর্ধেকও বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। গণফোরামকে যতখানি বিশ্বাস করে, বিএনপিকে তাও বিশ্বাস করে না। গণফোরামকে আরও বেশি বিশ্বাস করতো। কিন্তু ওই মোকাব্বির, না কি নাম, হায়রে হায় এমপি হইয়া, আমি এই সংসদ মানি না। তাহলে সংসদে যাব কেন? আমি আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া জানিয়েছি। আমি আমার মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দিয়েছিলাম। কুড়ি যদি পাস করতো, তাহলেতো আমার গলায় বড় একটা ফাঁস পড়তো। আমিতো কুড়িকে এই সংসদে যেতে দিতে পারতাম না। যেখানে ভোট হয়নি। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সংসদকে স্বীকার করি না, আবার সেই সংসদে আমরা ৫/৬জন গেলাম। এটা ঠিক হয়নি। মানুষ এজন্য বিশ্বাস করে না। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হলে, সেই মানুষের কপাল দেখে, মুখ দেখে ভেতরের কথা বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, আমি ৩০৮ দিন অবস্থান করেছিলাম। কিন্তু সাংবাদিকরা বলে আমি অনশন করেছি। আমি কি পাগল যে অনশন করতে যাব। যেখানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। উনিতো চাইবেন আমি মরে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা জানে না আমি মারা গেলে শেখ হাসিনার ওপর কতখানি চাপ পড়বে। ৭৫ সালে সবাই আওয়ামী লীগ হয়েছিল। এমনকি জিয়াউর রহমান পর্যন্ত বাকশালের সদস্য হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর কেউ দাঁড়ায়নি। কেউ কথা বলেনি। আমি বলেছিলাম বঙ্গবন্ধুর তিন ছেলে কামাল-জামাল-রাসেল মারা গেলেও আমি কাদের সিদ্দিকী মরিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ আমরা নেবই নেব। চেষ্টা করেছি। আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন, সেদিন যদি আমি অস্ত্র হাতে না নিতাম, প্রতিবাদ না করতাম, তাহলে বহু নেতাকে কবরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় জাতীয় একটা সহনশীলতা দরকার। বিএনপিকে দেখতে পারে না আওয়ামী লীগ। আবার বিএনপি দেখতে পারে না আওয়ামী লীগকে। একটা সময় এমন না হয় যে আওয়ামী লীগ মরলে বিএনপির লোক যাবে না, আবার বিএনপির লোক মরলে আওয়ামী লীগ যাবে না। মসজিদে নামাজ পড়তে আওয়ামী লীগ গেলে আওয়ামী লীগের মৌলভী লাগবে, বিএনপি গেলে বিএনপির মৌলভী লাগবে। এরকম ভাল না।

গণফোরাম নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদের সভাপতিত্বে ও জগলুল হায়দার আফ্রিকের পরিচালনায় কাউন্সিলে আরও বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, কাউন্সিল কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, বিকল্প ধারা একাংশের মহাসচিব অ্যাড. শাহ আহমেদ বাদল প্রমুখ।