দ্রুত অপারেশনাল কাজের জন্য সরঞ্জাম কিনছে পুলিশ
আমির হামজা,দ্য রিপোর্ট: দ্রুত অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার জীপ,মোটরসাইকেল এবং ডবল কেবিন পিক আপ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। আজ সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা শাখা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য এসব জীপ, মোটরসাইকেল এবং পিক আপ কেনার বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।
অর্থ বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল অনুমোদন সাপেক্ষে পুলিশের বিভিন্ন জেলার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ এ যানবাহন সমূহ কিনবে।পুলিশ গত মে মাস আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছিল। এর মধ্যে ব্যয় ব্যবস্থাপনা শাখার অনুমোদিত পুলিশের যানবাহন কেনার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত আছে। এছাড়া ব্যয় ব্যবস্থাপনার শাখার চিঠিতে আরো বলা হয়েছে অর্থ বিভাগের ব্যয় সংকোচ পরিকল্পনার আওতায় কতিপয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যয় স্থগিত বা হ্রাসকরণ সংক্রান্ত পরিপত্রের নির্দেশনার ভিত্তিতে পুলিশ এ যানবাহন কেনার অনুমতি দিয়েছে।
অর্থ বিভাগের উপসচিব চৌধুরী আশারাফুল করিম স্বাক্ষরিত চিঠিতের আরো বলা হয়েছে এ ক্রয়ের বিষয়ে আবশ্যক সকল আনুষ্ঠানিকতা পালনসহ প্রচলিত আর্থিক বিধি-বিধান প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।চিঠিতে বলা হয়েছে অর্থ বিভাগের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে ক্রয় করা যাবে না। অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। ন্যূনতম ১৫০ সিসি পুলিশ ভার্সন ৫০ টি মোটরসাইকেল প্রতিটি ২ লাখ ৫০ হাজার দরে এতে মোট খরচ হবে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হবে বলে ধরা হয়েছে । বিভিন্ন জেলার পুলিশের জন্য চারটি জীপ প্রতিটি ৬৫ লাখ টাকা ধরে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া জেলা পুলিশের জন্য ২৮ টি ডাবল কেবিন পিক আপ প্রতিটি কেনা হবে ৫৫ লাখ টাকা । এতে সরকারের খরচ হবে ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এদিকে মে মাসে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১২২৬ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছিল পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য জ্বালানি, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ও নিরাপত্তা সামগ্রী কেনার জন্য এই বাজেট প্রণয়ন করেছে পুলিশ সদর দপ্তরের ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট শাখা।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদর দপ্তরের ওই বাজেট কমিটিতে আলোচনা করে অর্থের ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকট রয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য যে সকল দাঙ্গা-দমন ও অপারেশনাল সামগ্রীর প্রয়োজন হয়, সেসবেরও বাহিনীতে অপ্রতুল রয়েছে। দাঙ্গা-দমন ও অপারেশনাল সামগ্রী সময় মতো সরবরাহ করা না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেয়া পুলিশের পক্ষে দুরূহ হবে। এমনকি মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা করছে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।এসব বিষয় বিবেচনা করে পুলিশ সদর দপ্তরের ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট শাখা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রণয়ন করা পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার, অপারেশনাল ও নিরাপত্তা সামগ্রী কেনার জন্য চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। আটটি খাত উল্লেখ করে এ সংক্রান্ত ১২২৫ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬১০ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখিত, খাতগুলোর মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনাকাটায় ব্যয় হবে। সাড়ে ৭৭ কোটি টাকায় নিরাপত্তা সামগ্রী কেনা হবে। নির্বাচনে পুলিশের ডিউটি পালন করার জন্য ২২৬ কোটি টাকা গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঠেকাতে ৫৪০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে উল্লেখিত বাজেটে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ও কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার কিনতে মোট ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৮ নম্বর খাতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির ফলে পুলিশের গতিও বাড়াতে হবে। নতুন সৃষ্ট পদে পুলিশের পদায়ন ও পদোন্নতি হওয়ায় গাড়ির প্রয়োজন। জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পেট্রোল, ডিজেল ও লুব্রিকেন্ট কিনতে ২০৪ কোটি টাকার প্রয়োজন।