আইএমএফের রিজার্ভের শর্ত সরে আসতে চাচ্ছে বাংলাদেশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আইএমএফ-এর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির শর্তের মধ্যে জুন শেষে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এই শর্ত পূরণ না হওয়ায় আইএমএফ-এর কাছে এটি থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। এটি অর্জনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিগত অর্থবছর (২০২২-২৩) এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আয় না হওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। আর জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় ফর্মুল আগামী জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। যদিও এটি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ছিল গেল সেপ্টেম্বরে। আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ ধরনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রেগুলো এমন আভাস দিয়েছে। সূত্রমতে, আইএমএফ-এর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করার আগে তাদের দেওয়া শর্ত ও সংস্কার কর্মসূচি পর্যালোচনা শুরু হবে ৪ অক্টোবর থেকে। এ পর্যালোচনা করতে ইতোমধ্যে আইএমএফ-এর প্রতিনিধিদল ঢাকায় চলে এসেছে।
১৮ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যালোচনা চলবে। এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশে আইএমএফ-এর মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ। সংস্থাটির কার্যক্রমের অংশ হিসাবে আইএমএফ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. কৃষ্ণমূর্তি ভি সুব্রামানিয়ান দুদিনের সফরে ১৮ অক্টোবর ঢাকা আসবেন এবং ২০ অক্টোবর ঢাকা ত্যাগ করবেন। তার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঋণ কর্মসূচিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ করবেন। তবে মিশনের অন্য সদস্যরা ৪ থেকে ১৮ অক্টোবর দুই সপ্তাহ ধারাবাহিক বৈঠক করবেন।
প্রথম দিন বৈঠক করবেন অর্থসচিব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে। এটি হবে আইএমএফ-এর ৪৭০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য সংস্কার কর্মসূচির প্রথম পর্যালোচনা কার্যক্রম।
জানা যায়, সফরকালে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির সূচকগুলো জানতে চাইবে। তবে মিশন এমন সময় সফর করছে, যখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও রিজার্ভে একধরনের বিরূপ প্রভাব চলছে। বেড়েছে খেলাপি ঋণের হারও। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪.৩১ বিলিয়ন ডলার, যা গত পাঁচ মাসে সর্বনিম্ন। সেপ্টেম্বরে ১.৩৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এসব বিষয় আইএমএফ আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল।
এ মুহূর্তে আইএমএফ-এর হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী এর অঙ্ক ২ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার। তবে ঋণের জন্য শর্ত অনুযায়ী নিট রিজার্ভের লক্ষ্যে পৌঁছতে আরও ৩ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, রিজার্ভ বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন আর বাড়ানো যাচ্ছে না।
তবে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার কমেছে। কারণ, জ্বালানি, সার ও খাদ্যদ্রব্য আমদানির জন্য সরকারকে রিজার্ভে হাত দিতে হয়েছিল। বিষয়টি আইএমএফ-এর প্রধান কার্যালয়ে জানানো হয়েছে। আইএমএফ মিশন এসেছে। তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। নিট রিজার্ভ শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরে কনভিন্স করার চেষ্টা করা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত এই শর্ত থেকে অব্যাহতি চাওয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত, কোনো দেশ পরিমাণগত কর্মক্ষমতা মানদন্ড (কিউপিসি) শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পরও আইএমএফ-এর নির্বাহী বোর্ড যদি মনে করে ঋণ কর্মসূচিটি চালিয়ে নেওয়া যাবে, তাহলে বাকি অর্থ ছাড়ের অনুমোদন আসতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, রিজার্ভ বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে-বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাহিদ হোসেন বলেন, এটি সঠিক ছিল না বলেই কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ডলারের চাহিদা কমানোর চেষ্টা করছে। বিনিময় হারকে চেপে রেখেছে। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পর চলতি হিসাবের ঘাটতি কিছুটা কমলেও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি কমেনি। এখন রেমিট্যান্সেও ধস নেমেছে। তাদের মুদ্রা বিনিময় হার নীতি কড়াকড়ি করলেই রেমিট্যান্সে ধস নামে। তাহলে এটি কি সঠিক পদক্ষেপ ছিল।