সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে ডলার আসবে দেশে
আমির হামজা, দ্য রিপোর্ট: সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ তিন মাস আগে দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় ধীরে চলনীতির কারণে এখন কেউ রপ্তানি আদেশ পায়নি। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন বলছে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারলে দেশে ডলারের সংকট কিছুটা হলেও মিটবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে দেশে বোরো ধানের ভরা মৌসুমে মে মাসে বেড়েছিল এখনটা কমে আসেনি। ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ(টিসিবি) ঢাকা মহানগরীর বাজারে চিত্রে অনুসারে এখন প্রতিকেজি মিটিকেট চালের দাম সর্বনিম্ন ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৭২ টাকা বিক্রি হচ্ছে।এদিকে সুগন্ধি চালের রপ্তানি বিভিন্ন রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান যে প্রস্তাব দিয়েছে তা অনুমতি দেওয়া যায় কিনা আগামীকাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধান কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হবে। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধান কমিটির বৈঠককে সভাপতিত্বে করবেন খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এছাড়া ডিম,পেয়াজ আর আলুসহ ছয়টি নিত্য পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তা নিয়েও আলোচনা হবে। যেমন নির্ধারিত দর অনুযায়ী প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম ঠিক করে দেয়। এর কোনোটিই বাজারে কার্যকর হয়নি। প্রায় প্রতি মাসেই বেঁধে দেওয়া হয় ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। যদিও বাজারে দাম থাকে বেশি।রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সব সময়ই চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। তবে ২০২২ সালের ফেরুয়ারিতে রপ্তানি বন্ধও করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রপ্তানি হয় ৬ হাজার ৭৫৬ টন সুগন্ধি চাল।
ফেব্রুয়ারীতে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর গত ৩০ জুলাই আবার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। আগে অনুমোদন পাওয়া ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ হাজার ২৪৪ টন সুগন্ধি চাল তারা ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে রপ্তানি করতে পারবে।রপ্তানিকারকরা বলছেন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি সুগন্ধি চালের ভালো বাজার রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে রপ্তানি অনুমোদন পাওয়ায় আমরা উৎসাহ বোধ করছি।এদিকে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছিলেন, "অনুমতি দেওয়ার পর রপ্তানিও হচ্ছিল। তবে চালের দাম বাড়তে থাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমরা তা বন্ধ রেখেছিলাম। এখন আবার তা উন্মুক্ত করা হয়েছে। নতুন কিছু আবেদনও জমা পড়েছে, যাদের অনুমতি দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় একটু ধীরগতিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।"
খাদ্য পরিধান কমিটির কার্ষপত্রে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খানের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা এক চিঠিতে দেখা গেছে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক দিনাজপুর কর্তৃক মেসার্স স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অতিরিক্ত সুগন্ধি চাল মজুদের অপরাধে মামলা দায়ের করেন। আবেদনকারীকে স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড এর দিনাজপুর কারখানার উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রয় কার্ষক্রম অতিসত্ত্বর শুরু করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর আবেদন করেন । স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩০০০ মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি প্রদান করেন । কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় হতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সুগন্ধি চালসহ সকল প্রকার চাল রপ্তানি সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য পত্র দেন । বর্ণিতাবস্থায় সুগন্ধি চাল মজুদ ও রপ্তানির বিষয়ে কার্ষক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি প্রদানের পূর্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনাক্রমে সুগন্ধি চালের মজুদ পরিস্থিতি, দেশীয় চাহিদা নিরুপণসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্ষালোচনা করবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত ৫ই মে ২০১১ গেজেট এ সুগন্ধি চালের রপ্তানি বা মজুদ সংক্রান্ত কোন তথ্য উল্লিখিত নেই, সুগন্ধি চাল রপ্তানি বা মজুদ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গেজেট প্রকাশ করতে পারে ।খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতির বিধান জারী করাও বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।খাদ্য পরিধান কমিটির কার্যপত্রে চাল সহ খাদ্যশস্যের দাম আরো বৃদ্বির করা প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বাজারে চালের মূল্য বৃদ্বি পাওয়ার কারণ জানতে চান। খাদ্য মন্ত্রী সভাকে অবহিত করেন যে, "অটো রাইস মিলে চাল পলিশ করার কারণে বছরে প্রায় ১৬ লাখ মে টন চাল নষ্ট হচ্ছে । এছাড়া বিদ্যুৎ,পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে । তবে বর্তমানে বাজারে চালের দামের নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে"।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মত প্রকাশ করেন যে ,"গত এক বছরে খাদ্যশস্যের মূল্য অনেকে বৃদ্ধি পেয়েছে বিশেষ করে গম ও আটার মূল্য বৃদ্বির হার বেশি। এ বিষয়ে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার জানান যে চালে আমরা স্বয়ংসর্ম্পূণ হলেও গমে আমদানি নির্ভর। আমাদের ৬০-৭০ লক্ষ মে টন গমের চাহিদার মধ্যে মাত্র ১০ লক্ষ মে টন গম দেশের উৎপাদিত হয়। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্বের কারনে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গম আমদানি কম হয়েছে । এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মোঃ ইসমাইল হোসেন এনডিসি জানান, গত মে সাল থেকে ভারতে গম রপ্তানি নিষেধাঞ্চা থাকার কারণেও গম আমদানি কম হয়েছে। পরবর্তীতে রাশিয়ার সাথে চুক্তির পরে গম আমদানি হচ্ছে এবং বেসরকারি পর্যায়ে গম আমদানির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে এ বছর প্রায় ৪৮ লক্ষ মে টন গমে আমদানি হয়েছে । বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম হ্রাস পাচ্ছে।কৃষি সচিব গমের উৎপাদন বিষযে সভাকে অবাহিত করেন যে গম এবং বোরো ফসল একই সময়ে উৎপাদন হয় বলে গম ও বোরো ফসল উৎপাদনের প্রতিযোগিতা হয় । তিনি আরো জানান, যে আমাদের দেশে বেকারি শিল্পের বিকাশের কারণে গমের চাহিদা বেড়েছে। এসময় বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন গম এবং ভূটার মিশ্রণ করে ব্যবহার করা হয়, কি পরিমাণ ভূটা গমের সাথে মিশ্রিত হচ্ছে তার পরিস্কার হিসাব থাকা প্রয়োজন ।
(দ্য রিপোর্ট/ আ হা / মাহা/ আট অক্টোবর দুইহাজার তেইশ)