দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা সরকারের: কৃষিমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দিশেহারা ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু এখনো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে এই তিনপণ্য। যা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। বেঁধে দাম বাস্তবায়ন করতে না পারার সে কথা এবার স্বীকার করলেন সরকারের খোদ কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। এ নিয়ে সমালোচনা করেন, আমরা মেনে নেবো। কারণ, এটা আমাদের দুর্বল দিক। কিন্তু আমাদের সবল দিকগুলোও দয়া করে মিডিয়াতে তুলে ধরবেন।’
গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিম (ফার্ম) ১২ টাকা, দেশি পেঁয়াজের কেজি সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা, আলু হিমাগার পর্যায়ে পাইকারিতে ২৬-২৭ টাকা এবং খুচরায় সর্বোচ্চ ৩৬ টাকায় বিক্রির দাম বেধে দেয় সরকার। কিন্তু এখন পর্ষন্ত এই দামে পণ্য মিলছে না কোথাও।আলু ৫০টাকা, পিঁয়াজ দাম বাড়তে বাড়তে ১০০ টাকায় পৌঁছেছে।সাংবাদিকদের উদ্দেশে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব বিবেচনায় এ বছর চাল উৎপাদন, বিতরণ এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা একটা ভালো অবস্থায় রয়েছি। আমি সাংবাদিক বন্ধুদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি, এ ব্যাপারগুলোও যেন গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়।এসময় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয় আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে কি না।
জবাবে তিনি বলেন, ‘মোটেই হাল ছেড়ে দেইনি। আমরা এখনো যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। উৎপাদনের পার্টটা হলো আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজার মনিটর করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারপরও আমি দায়িত্ব এড়াতে পারি না। কেবিনেট সিস্টেমে সব মন্ত্রী এটার জয়েন্ট রেনপনসিবিলিটি, সব সময়ই এটা।’কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের প্রতি অভিযোগ এনে মন্ত্রী বলেন, ‘ আমরা চেষ্টা করছি। কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা খুবই অসহযোগিতা করছে। তারা ঠিকমত সরবরাহ করছে না, এটা বড় অন্তরায়। নানাভাবে আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ লেভেলে তাদের চাপ সৃষ্টি করলে সাপ্লাই-ই দেয় না, বন্ধ করে চলে যায়। এ ধরনের কিছু ব্যাপার রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘একজন মানুষের জীবনধারণের জন্য যে খাদ্য প্রয়োজন তার ৬৫-৭০ ভাগই খরচ হয় চাল কিনতে। অর্থাৎ ৭০ ভাগই খরচ হয় চাল কেনার জন্য। কাজেই চালটা কিন্তু খাদ্যের প্রথম ও প্রধান উপাদান। পেঁয়াজের দাম আলুর দাম কতটুকু সেটা আমি ওইভাবে বলতে চাই না। তবে চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যূনতম যে খাবারটা সেটা কিন্তু কিনতে পারছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজ আমাদের দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়, কিন্তু পেঁয়াজ খুবই পচনশীল পণ্য। এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজ তোলা হয়, তারপর দুই মাসের বেশি থাকে না। পেঁয়াজ পচে যায়, শুকিয়ে যায়। এজন্য পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের সমস্যা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। গত বছর যথেষ্ট পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল, চাষিরা বিক্রি করতে পারেনি। আলুরও একই অবস্থা, রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। এবার পরিস্থিতি উল্টো। উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগে কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও আড়তদাররা ব্যাপকভাবে মুনাফা করছে। এতো লাভ করা উচিত না। ২০ টাকা খরচ হয় না, বিক্রি করছে ৪০-৫০ টাকায়।’পেঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে জানিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, ‘ওভাবে পেঁয়াজ রাখলে ৫ শতাংশও পচে না। এ প্রযুক্তি যদি আমরা নিয়ে যেতে পারি আগামী দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। নতুন জাত বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন, হেক্টরপ্রতি ৪০-৫০ টন উৎপাদন হয়। আগামী দিনে বাংলাদেশে পেঁয়াজেরও কোনো সমস্যা থাকবে না।’
শীতকাল আসলে সবজির দাম কমে আসবে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, শীতকাল আসছে, পর্যাপ্ত সবজি হবে। সব সবজির দামই কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি। আরও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি আছে। এসব বিবেচনায় এ মুহূর্তে সবজি ও অনেক খাদ্যপণ্যের দাম বেশি।খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।