ঋণের শর্ত মানতে হলে খেলাপি কমাতে হবে- আইএমএফ
আমির হামজা, দ্য রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণের জন্য যখন ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমার কথা, তখন উল্টো খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে বেড়ে যাচ্ছে । তাই প্রথম কিস্তির শর্ত বাস্তবায়ন দেখতে আসা সংস্থাটির কর্মকর্তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, প্রতি বছর যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাংকগুলো নির্ধারণ করছে, প্রকৃত আদায়ের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক কম হওয়ায় রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সঙ্গে বৈঠকে এ ঋণ অতি দ্রুত কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেছে আইএমএফ। আইএমএফে রিভিইউ টিমটি দেশের প্রধান সরকারী সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্ষালয়ে সরকারী ব্যাংকগুলোর অবস্থা জানতেও বৈঠক করেছে ।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামীতে খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনে সরকারের উদ্যোগের কথা আইএমএফকে জানিয়েছেন সচিব। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুসারে ২০২৩ সালের জুন মাসে সরকারী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশ যা মোট হিসেবে ৭৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত জুন শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী,অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএলএই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার।
তবে দেশের ব্যাংকিং মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা । আর বেসরকারী ব্যাংকের ঋণের শতকরা হার হয়েছে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "প্রেজেন্টেশনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের চিত্র পৃথকভাবে দেখানো হয়েছে। ফলে সরকারী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৪৭ দশমিক ৭১ শতাংশ হয়েছে।" সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। কিন্তু আর্থিক কোম্পানি আইনটি এখন সংসদে অনুমোদনের জন্য এখনো যায়নি। তবে আইএমএফের প্রথম কিস্তির রিভিউয়ের শর্ত অনুসারে সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালের মধ্যেই দুইটি আইন সংসদে পাশ হতে হবে।
ডলার সংকট কাটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা নিচ্ছে সরকার। এ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে সংস্থাটির একটি রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফরে এসেছে।রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে। মিশন চলাকালে তারা বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। রিভিউ মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইএমএফের পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী ডিসেম্বরে ছাড় হতে পারে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ।
(দ্য রিপোর্ট/ আ হা / মাহা/ আট অক্টোবর দুইহাজার তেইশ)