দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন কমিশনও মনে করছে, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশিত ‘অনুকূল পরিবেশ’ এখনো হয়নি। এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছে ইসি। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। 

 

প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার মতভেদও নিরসন হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে নিজ নিজ সমর্থন প্রদর্শনের যে চেষ্টা করছে তাতে সংকট নিরসন হবে না বলে মনে করছে ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর কখন কোন কাজ করা হবে, তার রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। লম্বা সময় রেখে তফসিল দেওয়া হবে, নাকি ৪০-৪৫ দিন সময় দিয়ে তফসিল দেওয়া হবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন নির্বাচন কমিশনাররা।

গণমাধ্যমের সম্পাদকদের কাছে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে দেওয়া এক ধারণাপত্রে নির্বাচন কমিশন এসব উল্লেখ করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে যথেষ্ট আইন থাকলেও দলগুলোর সহযোগিতা না পেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার ৩৮টি গণমাধ্যমে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়।

ইসির ধারণাপত্রে বলা হয়, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক কর্মশালা ২৬ অক্টোবর আয়োজন করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও কমিশনের বিষয়ে কতিপয় রাজনৈতিক দলের অনাস্থা কাটিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়াস আমরা অব্যাহত রেখেছি। তবে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি এখনো হয়ে উঠেনি। প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদের নিরসন হয়নি।’

রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন জানিয়ে ইসি বলেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) দলগুলো নিজ নিজ সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে মীমাংসা বা সংকট নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না।

বিষয়টিতে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে ইসি বলেছে, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের করণীয় কিছু নেই। নির্বাচন বিষয়ে দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। তবে আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমান্তরাল মিথষ্ক্রিয়া না হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে আইনের বাস্তবায়ন সহজসাধ্য নয়। নির্বাচন নিয়ে সংকট অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে মনে করে ইসি।

ধারণাপত্রে আরও বলা হয়-বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, মতানৈক্য ও সংকট হতেই পারে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অন্বেষণ করা হলে তা অধিকতর ফলদায়ক হতে পারে।

টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহমর্মিতা নিয়ামক। গণতন্ত্র নিয়ে কমিশন কাজ করে না। নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। তবে নির্বাচনই হলো গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচন আয়োজনে নিরবচ্ছিন্ন সংকট থাকলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এতে বলা হয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা অপরিহার্য। স্বচ্ছতা বা দৃশ্যমানতা নির্বাচনের বিশুদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিপালনে সহায়ক হয়।

রাজনৈতিক সমঝোতার আশা প্রকাশ করে বুধবার নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন-নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। তা না হলে পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে। তবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা ছাড়া তাদের গত্যন্তর নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এতে নির্বাচন কমিশনের উপর বিভিন্ন মহলের অনাস্থার কথা উল্লেখ করা হয়।

ধারণাপত্রে বলা হয়, সবার সমন্বিত সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে নির্বাচন অর্থবহ হয় এবং এতে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে।

রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটার সাধারণের অবাধ অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনি কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর আন্তরিক, পেশাদার ও পক্ষপাতহীন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন সম্ভব।