দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কক্সবাজারকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে উপকূল  অতিক্রম করেছে ঘূর্নিঝড় হামুন। এপর্যন্ত জেলায় ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে ৩০ জন। ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ জনগণ। তারা বলছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। খোলা হয়নি কন্ট্রোল রুম।  এমন কি সতর্ক করা হয়নি। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কক্সবাজার শহরসহ আশপাশের এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

১০০ কি.মি. গতিবেগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কক্সবাজার আঘাত হানে ঘূর্নিঝড়টি।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো.ইমাম উদ্দিন বলেন, দুই ঘন্টা স্থায়ী ঘূর্নিঝড়টি গড়ে ১০০ কি.মি. তীব্র বেগে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করেছে। এর সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৪৮ কি.মি.।

স্থানীয় জনগনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা। তীব্র বাতাস আর বৃষ্টিতে শুরু হওয়া ঘূর্ণিঝড় হামুনের তান্ডবের চলে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত। পুরো শহর জুড়ে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ।

শহরজুড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। উত্তাল রয়েছে সমুদ্রসৈকত। বেড়েছে পানির উচ্চতা। উপকূলীয় এলাকা থেকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এরই মধ্যে খবর আসে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তান্ডবে গাছ চাপা ও দেয়াল পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে মহেশখালীর হারাধন ও চকরিয়া বদরখালীর আসকর আলী এবং শহরের পাহাড়তলীর আব্দুল খালেকসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বিধ্বস্ত হয়েছে একাধিক ঘরবাড়ি।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপ-পরিচালক আতিশ চাকমা বলেন, তীব্র বাতাসে সড়কে ও উপ সড়কে অনেক গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। আপাতত এগুলো সরাতে ব্যস্ত আমরা।

পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরি বলেন, মানুষ মনে করেছিলো ঘূর্নিঝড় হামুন মধ্যরাতে আঘাত হানতে পারে কিন্তু কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই এমন তান্ডবের শিকার হতে হয়েছে। এরপরেও পাহাড়ে ঝুকিঁতে বসবাস করা মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্যে পৌর পরিষদের সবাই কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবো।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর প্রভাবে উদ্ভূত দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ আপনকালীন সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফ, চাকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী-এই ৯ উপজেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে সর্বমোট সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা অর্থ উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া ১৪ টন চালও বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার আলোকে আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, ৫ লক্ষ ৫ হাজার ৯৯০ জনের ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন জেলার ৫৭৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও জেলা ১১ লক্ষ ২৫ হাজার নগদ টাকা, ৬৪০ মেট্রিক টন চাল ও ৭০০ বান্ডিল ঢেউটিন মজুদ আছে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।