আমির হামজা. দ্য রিপোর্ট: সবকিছু ঠিক থাকলে  ২৪ নভেম্বর ২০২৬ সালের  স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। এলডিসি উত্তরণে  উপলক্ষ্যে জাপানের এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাজেশন (জেট্রো) বলছে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেজ মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে ।

গত নভেম্বর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের জেট্রো আবাসিক প্রতিনিধি ইয়েজি আন্দো বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিবকে চিঠি এ বিষয়টি অবহিত করে বলেছে চিঠিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের ধাপগুলো নির্ধারণ করেছে এ ব্যাপারে তার খুশি হয়েছে । এ উত্তরণে বাংলাদেশকে অবশ্যই বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আমারা আশা করি এলডিসি চ্যালেঞ্জগুলো মোবাবেলা করতে অবশ্যই সরকার , নীতিনির্ধারকরা, বেসরকারী উদ্যোক্তদের আন্তজাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে সঠিক সিদ্বান্ত বিষয়ে উদ্যোগ রপ্তানি ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্বি ধরে রাখতে হবে। অবশ্য বাংলাদেশ এসব চ্যালেঞ্জ মোবাবেলায় দক্ষতা দেখিয়েছে । বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি( ইপিএ) ,অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং ম্ক্তুবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলাপ আলোচনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে । আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।এদিকে চলতি মাসের প্রথম দিকে এলডিসি তালিকায় থাকার সময়ে যেসব বাণিজ্য সুবিধা পেত বাংলাদেশ, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর তা বহাল থাকবে কি না- এ নিয়ে গেল কয়েক বছর ধরেই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে স্বস্তির খবর পাওয়া গেল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছ থেকে। সংস্থাটি জানিয়েছে,এলডিসি তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রয়েছে, তাদের জন্য এলডিসি-উত্তরণের পরবর্তী সময়েও সহযোগিতা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে সহায়তা করার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এ অবস্থায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নতুন সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ এলডিসি-উত্তরণের পরও একটি নির্দিষ্ট সময়ে জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও সংস্থাটি এখন পর্যন্ত সম্প্রসারিত সুবিধা কতদিনের জন্য হবে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেনি।এলডিসি উত্তরণের ফলে পূর্বের বাণিজ্যিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ এরই মধ্যে নীতিনির্ধারকদের সাবধান করেছিলেন। শুধু তাই নয়, স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে স্বল্প সুদে যে ঋণ সহায়তা পাচ্ছে, তাও ২০২৭ সাল থেকে থাকবে না বলে আশঙ্কার কথাও বলেছিলেন কেউ কেউ।আগামী ২০২৪ সালের ফেব্রয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে সংস্থাটির নির্ধারিত ১৩তম মন্ত্রিপর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে সম্মেলনের প্রস্তুতি জন্য সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে জেনারেল কাউন্সিল বা সাধারণ পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এলডিসি-উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোকে সহযোগিতা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। যার মধ্যে রয়েছে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো উন্নত বিশ্বে শুল্ক ও কোটার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাজার-সুবিধা পেয়ে আসছে। আবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মগুলো প্রতিপালনের ক্ষেত্রেও তারা কিছুটা ছাড় পায়।

কোনো দেশ জাতিসংঘের কিছু নির্দিষ্ট উন্নয়নের মানদন্ডে পূরণ করলে সেই দেশকে আর এলডিসি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না। তখন নিয়ম অনুযায়ী, এলডিসি-উত্তরণ হওয়া দেশগুলো বিশেষ সুবিধাও পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ যেসব দেশ এলডিসি-উত্তরণের পথে রয়েছে, তাদের জন্য বিদ্যমান কিছু সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হলো।বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এলডিসি-উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে বাংলাদেশের শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারানোর কথা ছিল। তবে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ এলডিসি-উত্তরণ পরবর্তী ধাপে কিছু সময়ের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন সংস্থাটির মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো ইওয়ালা। তিনি বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে এ সিদ্ধান্ত।বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ৪৬টি। যার মধ্যে ১৬টি দেশ এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে সংস্থাওর সদস্য দেশ ১০টি। এগুলো হলো বাংলাদেশ, অ্যাঙ্গোলা, কম্বোডিয়া, জিবুতি, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, সেনেগাল, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও জাম্বিয়া।