মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট:  দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের ২০২২-২৩ হিসাব বছরের মুনাফায় বড় ধরনের পতন হয়েছে। ঢাকা স্টক একচেঞ্জে প্রায় ২৬ শতাংশ মুনাফা কম হয়েছে। অন্যদিকে চিটাগাং স্টক একচেঞ্জের মুনাফা ১২ শতাংশ কমেছে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছে দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেন কম হয়েছে। আর লেনদেন কমায় কমেছে লেনদেনের ওপর কমিশন। আর ডিএসইর আয়ের অন্যতম একটি উৎস লেনদেনের উপর কমিশন।

ডিএসইর আর্থিক প্রতিবেদন মতে, ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ডিএসইর আয় নেমেছে ২৩৮ কোটি ১৭ লাখ টাকায়। আগের বছর ৩২১ কোটি ৩০ লাখ টাকা আয় করেছিল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জ। ৮৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে। এদিকে ২০২০-২০২১ করোনাকালীন সময়েওডিএসইর আয় হয়েছিল ২৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ডিএসইর কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে ৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা বা ৩৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২১-২২ সালে এক্সচেঞ্জটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ১২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অথচ ২০২২-২৩ সালে তা নেমেছে ৮০ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, "নিঃসন্দেহে বলা যায় ফ্লোর প্রাইসের কারণে দুই স্টক একচেঞ্জের আয় কমেছে। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে পুঁজিবাজারকে কৃত্তিমভাবে আটকে রাখার চেস্টা করা হয়েছে। যেটা সাময়িক স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে বড় প্রভাব ফেলছে। পুঁজিবাজারলে চলতে দিতে হবে নিজস্ব গতিতে"। পুঁজিবাজারে কৃত্রিমতা ধ্বংসের কারণ বলে মনে করেন অধ্যাপক আবু আহমেদ।

গত বছর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে পুঁজিবাজারে। যার প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ জুলাই সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথম দিকে আর্শীবাদ মনে হলেও যতদিন পার হচ্ছে ফ্লোর প্রাইস যেন অভিশাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে এমনটা মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে। হাজার হাজার বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা নেই। ফলে এসব শেয়ার বিক্রি করে নতুন করে শেয়ার কিনতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। এতে স্বাভাবিকভাবেই লেনদেন তলানিতে ঠেকেছে, যা ডিএসইর আয় ও মুনাফায় ধস নামিয়েছে। যেখানে ডিএসইর লেনদেন দেড় হাজার কোটির ঘরে থাকতো কখনো বা দুই হাজারে ঘরেও ছুঁয়েছে সেখানে ফ্লোর
প্রাইস আরোপের পরে কমে একশো কোটির ঘরে নামতেও দেখা গিয়েছে। ডিএসইর প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২২- ২৩ অর্থবছরে ডিএসইর কমিশন আয় ৫০ শতাংশ কমে হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট আয়ের ৩৯ শতাংশ। যদিও আলোচ্য হিসাব বছরে এক্সচেঞ্জটির স্থায়ী আমানত বা এফডিআরসহ অন্যান্য আয় বেড়েছে। তা সত্বেও কমিশন আয় কমায় মুনাফা কমে গিয়েছে। মুনাফা কমে যাওয়ায় সর্বশেষ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশও কমিয়েছে ডিএসই। এ বছরের জন্য ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডাররা ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এ টি এম তারিকুজ্জামানও মনে করেন লেনদেন কমারকারনেই ডিএসইর মুনাফা কমেছে। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, "আগের বছরের তুলনায় লেনদেন কমেছে অনেক। লেনদেন কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আয় কমে যাওয়া। পক্ষান্তরে বেড়েছে ডিএসইর ব্যয়। যার ফলে মুনাফা আগের থেকে অনেক কমেছে"।

অন্যদিকে সিএসই নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ গত জুনে শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ লেনদেনের পরিমাণ কমে নেমে এসেছে ২৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। এ কারণে লেনদেন বাবদ আয়ও অর্ধেক কমে গেছে স্টক এক্সচেঞ্জটির। ২০২১-২২ অর্থবছরে লেনদেনের কমিশন বাবদ স্টক এক্সচেঞ্জটির আয় ছিল ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে সাড়ে চার কোটি টাকায় নেমেছে। এদিকে গতকাল (বুধবার)ডিএসইতে ৪০৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৬৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৪৫ কোটি ৪১ টাকার লেনদেন টাকার।

(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/ মাহা/ তেইশ নভেম্বর দুই হাজার তেইশ)