ডলারের চড়া দামে লোকসানে রানার
মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে বড় ধরণের লোকসানে পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পরে রানার অটোমোবাইলস চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লোকসানে পড়েছে।
ডিএসই সুত্রমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে দুই টাকা ২৭ পয়সা। আগের অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) একই সময়ে শেয়ার সমন্বিত প্রতি লোকসান ছিল ৮১ পয়সা। টাকার হিসেবে প্রায় ২৬ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে রানার অটোমোবাইলস। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) আট টাকা ৩৮ পয়সা। আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সমন্বিত এনওসিএফপিএস ছিল পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সা।
অন্যদিকে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকা ৩৬ পয়সা। যা গত জুন মাসেও ছিলো ৬২ টাকা ৬২ পয়সা। পুঁজিবাজারে রানার অটোমোবাইলস তালিকাভুক্ত হয় ২০১৯ সালে। পরবর্তীতে প্রতি বছর ১০ শতাংশ করে মুনাফা দিলেও ২০২৩ সালে কোন লভ্যাংশ দিতে পারে নি। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে। এই অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি গবেষণা ও উত্তোলিত অর্থ উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিওতে ব্যয় করে রানার অটোমোবাইল।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ডলারের দাম গত কয়েক বছর ধরে উর্ধ্বমূখীতার প্রভাব পড়েছে রানার সহ অন্যান্য আমদানি নির্ভর কোম্পানিতে। এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, "ডলারের দাম সহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিক অবস্থা পরিবর্তন না হলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে না। ডলারের দাম যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যে বিক্রয়ের মূল্য বাড়িয়েছে কিন্তু যতটুকু বাড়িয়েছে সেটা যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত দাম বাড়ালে ক্রেতা ছুটে যাবে। যার ফলে কোম্পানিগুলো পড়েছে বিপদে। এর ফলে লোকসানে ব্যবসা করতে হচ্ছে"। অধ্যাপক আবু আহমেদ আরো বলেন, এভাবে কোন দেশের অর্থনীতি চলতে পারেনা। কাঁচামাল আমদানি করে ব্যবসায় করে এমন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান মুনাফায় নেই। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রন ও অর্থনীতিক সামগ্রিক অবস্থা নিশ্চিতে জোর দেন এই পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে প্রতিটা পণ্যের কাঁচামাল ও সরবরাহ খরচ বেড়েছে। যার ফলে পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক। ডলারের এই উচ্চমূল্যের সাথে পাল্লা দিতে হাঁপিয়ে উঠছে কোম্পানিগুলো।
রানারের কর্মকর্তারা মনে করেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিক্রয় কমে গেছে রানার অটোমোবাইলের। রানার অটোমোবাইলের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার সনৎ দত্ত দ্য রিপোর্টকে বলেন, “দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থার জন্য রানারের সামগ্রিক ব্যবসায় মন্দা। চাহিদামতো পণ্য পৌছাতে পারছে না। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন সমস্যার ফলে বিক্রয় কমে গেছে। এছাড়া তিনি আরো বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে অনেক। যার ফলে পণ্য উৎপাদনে আগের থেকে বেশি খরচ হচ্ছে। ক্ষতি সামলাতে বর্তমানে নতুন কিছু পণ্য এনেছে রানার। আশা করছেন দ্রুতই এই ক্ষতি সামলে ঘুরে দাঁড়াবে রানার অটোমোবাইলস।
এদিকে, বর্তমানে রানারের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৪৮ টাকা ৪০ পয়সায়। প্রসঙ্গত, রানার গ্রুপের কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস কোম্পানি ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার বছরেই বাইক বিক্রি শুরু করে রানার । বর্তমানে ৮০ থেকে ১৬৫ সিসি মোটরসাইকেল রয়েছে রানারের। পাশাপাশি বর্তমানে রানারের ইলেক্ট্রনিক স্কুটার বেশ জনপ্রিয়। মোটরসাইকেলের পাশাপাশি রানার এলপিজি ও ডিজেল চালিত থ্রি হুইলার বাজারে এনেছে। এছাড়া ট্রাক্টর, পিক আপ ও বিক্রি করছে রানার অটোমোবাইল। নেপাল ও ভুটানেও মোটর সাইকেল বিক্রয় করছে রানার। এদিকে ডিএসইর তথ্যমতে রানার অটোমোবাইলসের শেয়ারের দাম বর্তমানে ৪৮ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। প্রসঙ্গত, রানারের পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোলডার আছে ৩৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগকারিদের কাছে আছে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ শেয়ার। বর্তমানে এ ক্যাটাগোরিতে লেনদেন হচ্ছে রানার অটোমোবাইলের শেয়ার।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/ মাহা/ সাতাশ নভেম্বর দুই হাজার তেইশ)