জেড ক্যাটাগরির দুর্বল কোম্পানির জন্য বিশেষ সুবিধা!
মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: গত মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিগুলোর তালিকাসংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করেছে। যা কার্যকর হবে এই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। জারিকৃত নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলোকে দুর্বল ক্যাটাগরিতে (জেড) নিতে আরও সময় লাগবে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্বল কয়েকটি কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দিতে বিএসইসি এরুপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে বিএসইসি বলছে, পুঁজিবাজার উন্নয়নের স্বার্থেই এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তিন ক্যাটাগরিতে কোম্পানিগুলো লেনদেন করছে। যা হচ্ছে এ, বি এবং জেড ক্যাটাগরিতে। এই ক্যাটাগরিতে থাকতে কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হয়। অন্যদিকে, ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিলে ‘বি’ এবং এজিএম না করা ও লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করবে। সাধারনত জেড ক্যাটাগরিতে কোন শেয়ার লেনদেন করলে অনেক সুবিধাবঞ্চিত থাকে। এই ক্যাটাগরির শেয়ার লেনদেন নিস্পত্তিতে তিন দিন সময় লাগে। এছাড়া, এসব কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচায় ঋণ পাওয়া যায় না। বর্তমানে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ লভ্যাংশ ঘোষণার পরই এটি কার্যকর হয়ে থাকে। তবে করোনাকালীন সময়ে পর থেকে এ আইনে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে অনেক দুর্বল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে নিজেদের পছন্দ মতো লোকজন। মালিকানা পরিবর্তনের আগের এসব কোম্পানিতে পছন্দের লোকজনকে দিয়ে শেয়ার কেনানো হয়েছে। বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের সুবিধা নিয়ে এসব উদ্যোক্তা পরিচালকরা নির্ধারিত সময়ে নিরাপদে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে পারবেন। এজন্যই দুইমাস সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। এসব কোম্পানির মাঝে রয়েছে , এমারেল্ড অয়েল, ইয়াকিন পলিমার, রিংশাইন, টেক্সটাইল, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ সহ আরো একাধিক কোম্পানি।
এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, পুঁজিবাজারের যেকোন সিদ্ধান্ত বা ঘোষনা সময় নিয়ে নিতে হবে এটা স্বাভাবিক। তবে যদি দেশের পুঁজিবাজারে কারসাজিকারী চক্র থাকে পুঁজিবাজার কারসাজিমুক্ত করতে অনেক সময় জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ ব্যাপারে বলেন, বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সুবিধার কথা চিন্তা করে সময় দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করলে তা বার্ষিক সাধারণ সভায় পাশ করা এবং বণ্টনের বিষয় রয়েছে। সে কারণে একটু সময় নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকলাও চিন্তা করার সময় পাবে। এসব কিছু বিবেচনায় বাজারের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা এক আদেশে স্টক এক্সচেঞ্জ এসব দুর্বল কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারেনি। বিএসইসির জারিকৃত নীতিমলার ফলে এসব কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে আরো তিন মাস সময় লাগবে।