দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: মাশরাফি বিন মুর্তজার সংবাদ সম্মেলনে তখন বুঁদ হয়ে আছেন সবাই। সাবেক এই অধিনায়ক কথা বলছিলেন সাম্প্রতিক সময়ে তাকে নিয়ে হওয়া সমালোচনা নিয়ে।

এর মধ্যেই ঢুকে পড়লেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে থাকলেন অপেক্ষায়।

সালাউদ্দিনের সঙ্গে বেশ ভালো সখ্য মাশরাফির। সংবাদ সম্মেলন শেষে আরেক সাবেক ক্রিকেটার ও এখন ব্রডকাস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল এসেও জড়িয়ে ধরেন তাকে। শুধু মাশরাফি বা আশরাফুল নন, অনেক ক্রিকেটারেরই কাছের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কোচ।

কিন্তু গত বছর বিপিএলের সময় ও পরে বেশ কড়া ভাষায়ই বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সমালোচনা করেছিলেন সালাউদ্দিন। দেশের অন্যতম সফল এই কোচ প্রশ্ন তুলেছিলেন তাদের গেম অ্যাওয়ারনেস নিয়ে। তা নিয়ে খেলোয়াড়দের কী প্রতিক্রিয়া ছিল?

এমন প্রশ্নের উত্তরে শুক্রবার সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমার মনে হয় পুরো বাংলাদেশের সব খেলোয়াড় আমার ওপর রাগ করেছে। অনেকে আমার সঙ্গে কথাও বলেনি, অনেকে রাগ করছে। অনেকে বলছে আপনি কেন বলছেন! আপনার মুখ থেকে এগুলো বলা উচিত হয়নি। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে আমি সেটা বলবই। অনেকের সেটা খারাপ লাগতেও পারে, অনেকের ভালো লাগতেও পারে। ’

‘আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে বলা উচিত। কারণ সবারই তো একটা দায়িত্ববোধ থাকে। যখন আপনি ১০-১২-১৫ বছর খেলে ফেলবেন, আপনার ওপর আমার প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে। একটা নতুন ছেলের কাছে কিন্তু আমি এত দায়িত্ব আশা করি না। কিন্তু আপনি যখন ১০-১৫ বছর খেলে ফেলবেন, তখন আপনার অনেক দায়িত্ব। ’

‘কারণ আপনি এতবার ফেস করছেন জিনিসগুলো। সেগুলো আপনি যদি আবার পুনরাবৃত্তি করেন তার মানে আপনি কিছুই শেখেননি। ওই কারণ থেকেই বলছি। এখন একটু ইতিবাচকভাবে বলেছি, কিন্তু এখনও আমি মনে করি ছেলেদের গেম অ্যাওয়ারনেস নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে। ’

গত বছর সালাউদ্দিনের তোলা ‘গেম অ্যাওয়ারনেসের’ প্রসঙ্গ সাড়া ফেলেছিল বেশ। এবার তার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে আছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ রিজওয়ান। তার কাছ থেকে কেমন শিখছে বাকি ক্রিকেটাররা?

সালাউদ্দিন বলেন, ‘তারা শিখছে। অবশ্যই তারা শিখছে। শেখাটা আসলে কীভাবে তাড়াতাড়ি নিতে পারে, সেটা হচ্ছে বিষয়। কিন্তু তার সঙ্গে সবাই কথা বলছে। রিজওয়ানের পরিকল্পনা উন্নত, অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা। তার কাছ থেকে ছেলেরা শিখছে। যখন সে বড় হয়েছে একটা ছেলে, অনেক প্রসেসের ভেতর দিয়ে বড় হয়নি। তার জন্য হঠাৎ করে নিতে পারা কঠিন। ছেলেরা চেষ্টা করছে। মাঝেমধ্যে একটু ব্রেইন এদিক-ওদিক হয়ে যাবে। তারপরও যে তাদের ইচ্ছে আছে সেটাই আমার কাছে ইতিবাচক। ’

সালাউদ্দিন একসময় ছিলেন জাতীয় দলের সঙ্গে। তখনকার চেয়ে বর্তমানের ক্রিকেটারদের সচেতনতা বেশি বলে মনে করেন তিনি। অভিজ্ঞ এই কোচ অবশ্য দায় নিচ্ছেন ক্রিকেটারদের ঠিকঠাক গড়ে তুলতে না পারারও।

তিনি বলেন, ‘ভুল তারা করবেই। আমার কথা হলো আজ একটা ভুল করেছে, পরের ম্যাচে যেন একই রকম ভুল আবার না করে। আরেকটা ভুল করুক, কোনো সমস্যা নেই। আমি মাইন্ড করি না তাতে। ছেলেরা ভুল করবেই, সে যেন ভুলটা আবার না করে। তাহলে সে অনেক কিছু শিখবে। যেহেতু আমরা ছোটবেলায় তাদের কোচিং অনেক খারাপভাবে করিয়েছি। এটা আমাদের দোষ। প্লেয়ারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ’

‘তাদের যদি আমরা আরেকটু গেম আওয়ারনেস দিয়ে বড় করতে পারতাম, তাহলে হয়তো এত সমস্যা হতো না। আমরা খুব কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলি। ছোটবেলা থেকে যদি আরেকটু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলতাম তাহলেও গেম অ্যাওয়ারনেস নিয়ে হয়তো এত সমস্যা হতো না। তবে আমি আশাবাদী। ছেলেরা চেষ্টা করছে। আমিও আগে জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলাম। তখন ছেলেদের যে মানসিকতা ছিল ফিটনেসের ব্যাপারে, এখন তো পুরোই বদলে গেছে। এখন কাউকে বলতে হয় না, নিজেই চলে যায় জিমে। পরিবর্তন তো আসছে। এখন দেখা যাক ব্যাটিং, বোলিংয়ে আস্তে আস্তে আসে কি না। ’