তুমব্রু সীমান্ত এখন অনেকটাই শান্ত, গ্রামে ফিরছে মানুষ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখন অনেকটাই শান্ত। সীমান্তে গোলাগুলির আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা ফিরেছেন গ্রামে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে থেমে থেমে গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছিল। তবে গতকাল রোববার রাতে কোনো ধরনের গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে মাঝে মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৭ জানুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সাথে বিদ্রোহী আরকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষে সীমান্তে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। সীমান্তের ৩৩ নম্বর পিলার, ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিমকূলে মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলির আওয়াজে কেঁপে ওঠে সীমান্ত লাগুয়া গ্রামগুলো।
গোলাগুলির শব্দে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সীমান্তে বসবাসকারীরা। গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনারপাড়া, ভাজাবনিয়া ও বাইশফাড়ি এলাকার শত শত পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেন ২৮টি পরিবারের ১৪০ জন সদস্য। যার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি সীমান্তের কাছাকাছি ১টি মাধ্যমিক ও ৫টি প্রাথমিকসহ ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ।
তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বদিউল আলম জানান, দীর্ঘদিন পর গোলাগুলি একটু কমেছে। তবে মাঝে মধ্যে দূর থেকে গুলির আওয়াজ শোনা যায়। আবার ঝামেলা শুরু হয় কিনা আতঙ্কে আছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, কয়েকদিন আগে সীমান্তের ঝামেলার কারণে পরিবারের সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলাম। বাড়ির কোনো জিনিসপত্র আনতে না পারায় স্বামী সেখানেই ছিলেন। পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় আবার নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান জানান, পরিস্থিতি ভালোর পথে তাই কয়েকদিনের মধ্যেই বন্ধ স্কুলে পাঠদান শুরু হবে।
এদিকে ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সীমান্ত পরিদর্শন করেন তারা। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্তের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন তারা।
এ সময় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথমে বান্দরবান সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তবে আমরা এখানে কোনো সমস্যা দেখতে পাইনি। আমার মনে হচ্ছে যে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।