বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মাশুক শাহীর ঘুমকন্যা ও ফিনিক্স হৃদয়
কবি মাশুক শাহীর কবিতা শ্রুতি মধুময়, নান্দনিক ও শৈল্পিক সুষমাযুক্ত। আবার তার কবিতা কখনো কখনো যুক্তিনির্ভর দর্শনাশ্রিত জোছনায় সমর্পিত। সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক নানা সংকট, আধুনিক দারিদ্র্য বিপন্নতা-বিষণ্নতা, কর্পোরেট বাণিজ্যের কদর্যতা, ভোগবাদের নৃশংসতা থেকে শুরু করে নির্ভার প্রেম, মানবিক-প্রাকৃতিক আরণ্যক শুদ্ধতা উঠে আসে তার কবিতার ক্যানভাসে। ফলে, পাঠকের এই কাব্যগ্রন্থ পাঠ যাত্রায় কবিতার ভাঁজে-ভাঁজে পাতায়-পাতায় যে গল্পগুলো ভেসে উঠতে পারে তা বিন্যস্ত নিরীহ স্নিগ্ধ অথচ ঋজু।
ছোট-বড় ৫২টি কবিতায় সুসজ্জিত মাশুক শাহীর ‘ঘুমকন্যা ও ফিনিক্স হৃদয়’ বইটি। এটা কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘খামবন্দী বায়োডাটা’। এ ছাড়া, তার চারটি শিশুতোষগ্রন্থও রয়েছে। কবি মাশুক শাহী ছোটকাগজ ‘প্রমা’ সম্পাদক হিসেবেও পরিচিত। তার কিছু কবিতা ইংরেজি, রুশ, উজবেকসহ কয়েকটি ভাষায় ইতোমধ্যেই অনূদিত হয়েছে।
বই মেলায় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থটি নিয়ে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টি ফোর ডটকম মুখোমুখি হয়েছিল কবি মাশুক শাহীর। স্টাফ রিপোর্টার মাহি হাসানের কাছে তিনি তাঁর কাব্য ভাবনার ডালা মেলে ধরেছিলেন সেদিন বই মেলার স্টলে।কবি মাশুক শাহী বলেন, বিচ্ছিন্নতার মাঝে অবিচ্ছিন্নতা সুর তুলতেই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছি। তাঁর সেই কাব্য ভাবনা পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হলো:
প্রশ্ন: ২২ বছর পর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ! এতো দেরি কেন?
উত্তর: প্রথমত আমি একেবারেই নিজের জন্য লিখি। নিজের শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য লিখি।চারিদিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চলছে অসুস্থতার আয়োজন। তার থেকে মুক্ত থাকতেই করি কবিতায় নিমজ্জন।ফলে নিজের সুস্থতা নিশ্চিত হলে আর প্রচারের কি প্রয়োজন।
প্রশ্ন: যে সৃষ্টিশীলতা আপনাকে রক্ষা করছে,তা কি অন্যদের কাছে যাওয়া উচিত নয়?
উত্তর: অসম্ভব কৌশলি প্রশ্ন করলেন।কাব্যগ্রন্থটি এতো দেরিতে প্রকাশের মধ্যে আপনার প্রশ্নের উত্তর হয়তো আছে।আমি গ্রন্থটির শিল্পমূল্যের থেকে এর সামাজিক-মনোস্তাত্ত্বিক উপযোগিতা দেখতে চেয়েছি এবং প্রকাশ করার কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্যেও তাই।
প্রশ্ন: যেমন,একটু বিস্তারিত যদি বলেন।
উত্তর: যাদের সাথে শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য আরণ্যক আলোয় থেকেছি কিংবা এখনো আছি।যারা আমার সাংস্কৃতিক-সামাজিক সহযাত্রী ছিল বা আছে।যাদের দেখা পায়-পায় না।অনুভব করি কিন্তু দেখি না।অজস্র ভার্চুয়াল বন্ধু আছে।আমি তাদের স্পর্শ করতে চেয়েছি,দেখতে চেয়েছি।তা একটা উপলক্ষ তো দরকার।এই অভিপ্রায় থেকে দীর্ঘ বাইশ বছর পর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ'ঘুমকন্যা ও ফিনিক্স হৃদয়'প্রকাশ করলাম।প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা অতোটা মুখ্য ছিল না।
প্রশ্ন: উদ্দেশ্যে কি স্পর্শ করতে পেরেছেন?
উত্তর: আমি অভিভূত ও আন্দোলিত।সত্যি বলছি,আমি যাদের চেয়েছি,তাদের অধিকাংশকে পেয়েছি।আমি বরেণ্য আপনজনের তুমুল সান্নিধ্য পেয়েছি।আমার শৈশব-কৈশোরের বন্ধুদের আলিঙ্গন করতে পেরেছি।আমার দুই ফেবু বন্ধু একজন সিলেট আর একজন কুমিল্লা থেকে এসে গ্রন্থটি নিয়ে গেছে।আমি মূলত আমাদের এই দূর্নিবার বিচ্ছিন্নতার মাঝে অবিচ্ছিন্নতার সুর তুলতেই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছি।সে উদ্দেশ্য আমি স্পর্শ করতে পেরেছি।উপরি আনন্দ গ্রন্থটির ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন।এই থেকে একটি বিষয় নিশ্চিত হয়েছি;কবিতা বা কোন শিল্প প্রচারেই প্রসার হয় না।সময়ের অনুরণন,বাস্তবতা ও যৌক্তিকতার সমন্বয় এবং দর্শনের নিষ্ঠতা ও স্নিগ্নতা না থাকলে পাঠকের মন স্পর্শ করা যায় না। অশেষ ধন্যবাদ।
(দ্য রিপোর্ট /মাহা/ ২৯ ফেব্রুয়ারি/ দুইহাজার চব্বিশ)