মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পিকনিক
দ্য রিপোর্ট প্রতিনিধি: গাজীপুর জেলার টঙ্গী কেরানির ট্রাক বস্তির ইব্রাহিম মারুফ সিনথিয়ার কাছ থেকে দুই লাখ, বাতের টেক বস্তির সেলিম মিয়ার কাছ থেকে ২ লাখ এ রকম ৫০ জায়গা থেকে চাঁদা তুলে ঝমকালো পিকনিকের আয়োজন করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাছ থেকে পিকনিকের খরচ বাবদ কোনো চাঁদা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়ে পিকনিক করার অভিযোগ উঠেছে। গত ২ মার্চ গাজীপুরের ছুটি রিসোর্টে এ পিকনিকের আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই পিকনিকে ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী এবং গাজীপুর জেলার উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান যৌথভাবে এর আয়োজন করেন। আর তারাই অনুষ্ঠানের সকল ব্যয়ভার গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ ব্যয়ের সব টাকা উঠাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারি দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
শুক্রবার সরজমিনে ছুটি রিসোর্টে গেলে রিসোর্টের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছয় শতাধিক লোকের জন্য রিসোর্টটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
ছুটি রিসোর্টের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রিসোর্টটিতে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকালের চা-কফি এবং নাস্তা মিলে জনপ্রতি ২ হাজার ৮' শ টাকার মতো দিতে হয়। এর সঙ্গে বেশ কিছু কক্ষও ভাড়া নিয়ে থাকেন আয়োজকরা।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর ৮০০ শতাধিক লোক নিয়ে শনিবার বনভোজন করে। তবে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য পাটি তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় করে থাকেন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পিকনিকে খরচ বাবদ ২ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়েছে। চাঁদা নেওয়া সবাই মাদক কারবারি। জানা গেছে, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর চোরাইমাদের আস্তানা থেকে দুই লাখ, কাওরাই স্টেশনের বস্তির হৃদয়ের কাছ থেকে ২লাখ। দুইয়ের নিচে কারও কাছ থেকে চাঁদা নেয়নি এ প্রতিষ্ঠানের কর্কমকর্তারা। এ ছাড়াও কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ির বিভিন্ন আস্তানা থেকে গাজীপুর জেলার উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান
প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আদায় করে । এ টাকার ভাগ বিভিন্ন জায়গায় যায় বলেও জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পিকনিকের নামে বিভিন্ন হোটেল-বার ও প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায় করেছেন। এই নিয়ে গাজীপুরের সাধারণ মানুষের মুখে আলোচনা হলো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যদি মাদক কারবারীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে পিকনিক করে তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব।
২ মার্চ শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুরো আয়োজনজুড়ে ছিল নানা প্রকার ভোজন বিলাস ও নাচ গান। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় আটশত কর্মকর্তা-কর্মচারি এ আয়োজনে অংশ নেন। পিকনিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিশাল আয়োজনে অংশ নেওয়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারিকেই কোন টাকা দিতে হয়নি বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান চালাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। তাই তাদের বিভিন্ন দিবস ও প্রোগ্রামে সম্মানি দিতে হয়। এছাড়া প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অংকের মাসোয়ারা তো আছেই। চাহিদা মতো টাকা না দিলে যত প্রকার হয়রাণী আছে তার সবটুকু প্রয়োগ করা হয়।
জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নে আমতলী সংলগ্ন সুকন্দি গ্রামে দৃষ্টি নন্দন ছুটি রিসোর্টটির অবস্থান। অরণ্য ঘেরা বিলাসবহুল রিসোর্টটিতে ছুটির দিন ছাড়াও বিভিন্ন দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এই বিনোদন কেন্দ্রে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে হয়।
গাজীপুর জেলার উপ-পরিচালক (ডিডি) মেহেদী হাসান বলেন, এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। এই পিকনিকে কারও কাছ থেকে কোনো চাঁদা তোলা হয় নি। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জনপ্রতি দুই হাজার টাকা তুলে পিকনিকের খরচ নির্বাহ করা হয়। কেউ চাঁদাবাজি করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিডি মেহেদী হাসান যাদের দিয়ে চাঁদা আদায় করেন তারা হলেন, এ আই তাজউদ্দিন। তিনি ডিডির বিশ্বস্ত। এএসআই মোঃ জামির ও এসআই মাইনুল এর মাধ্যমে এই টাকাগুলো আদায় করে থাকেন। জানা গেছে, ডিডি মেহেদী দীর্ঘদিন যাবত গাজীপুর জেলায় থাকায় বিভিন্ন স্পটে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। জানা গেছে, পিকনিকের চাঁদার বাইরে প্রতিষ্ঠানটি মাঠ পর্যায়ের থেকে মাসোহারাও তোলেন গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরের সহযোগিতায়। তার সঙ্গেএ এস আই জামিরও জড়িত রয়েছেন।