ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ধরতে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ব্যাংকিং খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ধরতে এবার কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ধরনের খেলাপিদের ধরতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ১ জুলাই থেকে নেওয়া হবে ব্যবস্থা, নির্দেশ লঙ্ঘন করলে জরিমানার কবলে পড়বে ব্যাংক। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ঋণখেলাপি গ্রাহকের ঋণ বেনামিতে নেওয়া হলে ও সেই ঋণের অপব্যবহার করলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করতে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ গঠন করতে ব্যাংকগুলোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ১ জুলাই থেকে নেওয়া হবে ব্যবস্থা এবং নির্দেশ লঙ্ঘন করলে জরিমানা দিতে হবে ওই ব্যাংককে।
ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণ গ্রহীতা সঙায় বলা হয়েছে, এমন কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহীতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যিনি বা যা-নিজের, তার পরিবারের সদস্যের, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির অনুকূলে কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা বা এর অংশ বা এর ওপর আরোপিত সুদ বা মুনাফা তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরিশোধ করে না।
কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে জালিয়াতি, প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে নিজের, তার পরিবারের সদস্যের, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নামে ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে, কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে যে উদ্দেশ্যে ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন সে উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে উক্ত ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা আর্থিক সুবিধা বা এর অংশ ব্যবহার করেছে, ঋণ বা অগ্রিম এর বিপরীতে প্রদত্ত জামানত ঋণ বা অগ্রিম প্রদানকারী কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া হস্তান্তর বা স্থানান্তর করেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আইনের ধারা ২৭খ-এ ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতার তালিকা, ইত্যাদি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ব্যাংকিং খাতের ঋণ ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান অন্তরায়। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি গ্রহীতা চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গৃহীত হলে শ্রেণিকৃত ঋণ হ্রাসসহ ব্যাংকিং খাতের ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ব্যাংকিং খাতের দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
কোনো ঋণ গ্রহীতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে ঋণ গ্রহীতা ইচ্ছাকৃত কি না তা নিরূপণের লক্ষ্যে বিবেচ্য বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ইউনিট কর্তৃক পর্যালোচনা করে শনাক্ত করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে শনাক্ত সম্ভব না হলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন নিয়ে আরও ৩০ দিন সময় পাওয়া যাবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে শনাক্তকৃত হলে শনাক্তকরণের কারণ উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতাকে তার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ১৪ কর্মদিবস সময় দিতে হবে।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে:
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঋণ গ্রহীতার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস-আরজেএসসির নিকট কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তালিকা দেওয়া হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হবেন না, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিদ্যমান আইন/বিধির আওতায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনো ঋণ গ্রহীতাকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক ঋণ পরিশোধ করে এই তালিকা হতে অব্যাহতি প্রাপ্তির পর ৫ বছর পর্যন্ত কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার অযোগ্যতা থাকবে।
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপিঋণ গ্রহীতা হিসাবে তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৭খ (৮) এর বিধান পরিপালন সাপেক্ষে তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে।
কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে চূড়ান্তকৃত হলে গ্রাহকসংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবটি অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান টেকওভার করতে পারবে না। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক গৃহীত ঋণ সম্পূর্ণ আদায় বা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
কোনো ব্যাংক ব্যাংক জ্ঞাতসারে বা ইচ্ছাকৃতভাবে এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ক্ষমতাবলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। যদি এই নির্দেশনা লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রত্যেক দিন অতিরিক্ত ১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ।