১৫ মিনিটে জাহাজের দখল নেয় জলদস্যুরা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের শিল্প গ্রুপ কবির স্টিলসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিককে তারা জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করেছে।তবে জলদস্যুরা এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজটি সোমালি উপকূলে নেওয়ার পর তারা এ বিষয়ে কথা বলবে।
জাহাজটি জলদস্যুরা কিভাবে দখলে নেয় সে বিষয়ে মালিক পক্ষকে জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে অবস্থান করা জাহাজটি থেকে তিনি জানান, জলদস্যুরা তাদের জাহাজে আক্রমণ করছে। এর ১৫ মিনিট পরই তিনি একটি ই-মেইল বার্তায় জানান, জলদস্যুরা জাহাজের দখল নিয়ে ফেলেছে।
মঙ্গলবার রাতে কবির স্টিলসের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানানো হয়।সবশেষ জানা গেছে, জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রেখেছে জলদস্যুরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগ। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে নাবিকদের কাছে থাকা ডলার। ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরের সোমালিয়া উপকূলের দিকে জাহাজটি নিয়ে যাচ্ছে তারা। জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান চট্টগ্রামে মালিকপক্ষের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠান। ওই বার্তায় তিনি বিষদ বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে একটি দ্রুত গতির বোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন তখন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল। তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন চলে এল। এভাবে ১৫-২০ জন এল জাহাজটিতে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল এল। ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। এখন ওই মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে দেবে। তবে সেটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এখন আমাদের থেকে ডিজেল নিচ্ছে। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন। কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাবিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সবাই নিরাপদে আছেন।
তিনি আরও বলেন, এস আর শিপিং এর আগেও একবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল। ফলে আমরা এবারও পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিতে পারবো আশা করছি। ২০১০ সালের এই কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ ‘জাহান মণি’ আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। তারা জাহাজের ২৫ নাবিকসহ মোট ২৬ জনকে প্রায় তিন মাস জিম্মি করে রাখে। ২৮ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিয়ে নাবিকদের মুক্ত করে আনা হয়।