কর কমিশনারের কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তির অভিযোগে দুদকের মামলা
শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার আ জা মু জিয়াউল হকের কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি পাওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদক উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার তদন্ত শেষে এই মামলা করেন।
দুদক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, কর কমিশনার আ জা মু জিয়াউল হক অবসর যাওয়ার আগে রাজশাহী কর অঞ্চল এবং ঢাকা ১৪ ও ৭ কর অঞ্চলের কর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্যও ছিলেন। তার আয়কর নথি ও সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে বেতন খাতে মোট ৭৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৮২ টাকা আয় পাওয়া যায় এবং পারিবারিক খরচ হিসাবে ৭৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩০৩ টাকা ব্যয় পাওয়া যায়। সেই হিসাবে তার সঞ্চয়ের পরিমাণ হওয়ার কথা ছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৭৯ টাকা।
অথচ তিনি তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে মোট ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ৮২২ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করেন, অনুসন্ধানে যা আয় বর্হিভূত সম্পদ হিসেবে উঠে এসেছে। এছাড়াও আ জা মু জিয়াউল হকের স্ত্রী মোর্শেদা কুদ্দুসের নামে বড় মগবাজার এলাকায় ৫৩ শতাংশ জমি যার দাম ২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং কুমিল্লায় এক কোটি দামের জমি রেজিস্টার করা পাওয়া যায়। এই সম্পত্তিগুলোতে দেখানো হয় যে মোর্শেদা কুদ্দুসের ভাই আব্দুল রকিব কাজমী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী অবস্থায় বোনকে জমিগুলো দিয়ে যান; যা কিনা পরবর্তী সময়ে জিয়াউল হকের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী আব্দুল রকিব তার স্ত্রী-সন্তান অথবা অন্য ভাই-বোনদেরকে কোন সম্পত্তি দান করেন নাই।
তদন্তে উল্লেখ করা হয়, এর থেকে প্রমাণ হয় যে অভিযুক্ত জিয়াউল হক নানান কৌশল অবলম্বন করে ও অন্যের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে অবৈধ অর্থে নামে-বেনামে সম্পতি গড়েছেন এবং পরবর্তী সময়ে নিজের দখলে নিয়েছেন। যার আনুমানিক দাম ৩০ কোটি টাকার বেশি।
তদন্তে আরো উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত কর কমিশনার দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছথেকে ধার নিয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর প্লটের ৩ নম্বর রোডে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু ওই ধার পরিশোধের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। এভাবে তিনি মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। উত্তরায় ৭ তলা বাড়ি নির্মাণসহ এমন বিভিন্নখাতে তার বিনিয়োগ দুদক তদন্তে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নাই। তিনি একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হয়ে দেশে-বিদেশে সন্দেহজনক লেনদেন করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ সম্পত্তি করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আয়কর নথিতে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া তিন কাঠা সমান পুকুরে মাছ চাষ থেকে আয়ের কথা তিনি উল্লেখ করলেও তার কোন বৈধ প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। তাই গত ১৪ মার্চ কোটি কোটি টাকার আয় বর্হিভূত সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়ায় অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার আ জা মু জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/মাহা/মার্চ ১৮, ২০২৪)