কর কমিশনারের স্ত্রীর কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি, মানিলন্ডারিং মামলা দুদকের
শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার আ জা মু জিয়াউল হকের স্ত্রীর কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি পাওয়ায় মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদক উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার তদন্ত শেষে এই মামলা করেন।
দুদক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, কর কমিশনারের স্ত্রী মিসেস মোর্শেদা কুদ্দুস তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে মোট ৫ কোটি ২৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করেন, অনুসন্ধানে যা আয় বহির্ভূত সম্পদ হিসেবে উঠে এসেছে।
অভিযুক্ত মিসেস মোর্শেদা কুদ্দুসের সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি বিদেশে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ধার নিয়ে ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর গ্রীন রোডে রেজিস্ট্রি খরচসহ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৫ কাঠার একটি জমি কিনেন। ওই জমিতে ৩৩০০ বর্গফুট আয়তনের ২৪ ফ্ল্যাটের ১২ তলা ভবন নির্মাণ করেন। এতে মোট এক কোটি ৮২ লাখ ৯১ হাজার ৪৫০ টাকা খরচ হলেও যাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছেন তাদের কোন ঠিকানা অথবা আয়কর নথির বর্ণনা দেন নি এবং ওই ধার পরিশোধের কোন প্রমাণও পাওয়া যায় নি। তিনি ধার পরিশোধ না করে ওই ভবন থেকে আয় করা টাকা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখেছেন। এতে প্রমাণ হয় যে তিনি তার স্বামীর অবৈধ অর্থকে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।
এছাড়াও তিনি গ্রীণ রোডের বাড়ির ফ্ল্যাট বিক্রি করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট কেনা, মিরপুরে ফ্ল্যাট নির্মাণের কথা উল্লেখ করে অবৈধ অর্থ গোপনের মিথ্যা তথ্য প্রদর্শন করেছেন।
সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে আরো দেখা যায়, ঢাকার গুলশান-২ এ ২৬৮০ বর্গফুটের ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট ২০০৮ সালের ২৭ মে, মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার মা এই ফ্ল্যাট দেওয়ার সামর্থবান ছিলেন কিনা তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই এবং তিনি তার মা'র আয়কর নথি দেন নি, তাই এই সম্পত্তির দাবিটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
এছাড়াও অভিযুক্ত মিসেস মোর্শেদা কুদ্দুস ২০১৪ সালের ৩১ মে ফেনীর কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ডের ৫.৮৫ শতাংশ জমি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ভাই আব্দুল রকিব কাজমীর কাছ থেকে দান হিসেবে পেয়েছেন এবং মোর্শেদা কুদ্দুসের নামে বড় মগবাজার এলাকায় ৫৩ শতাংশ জমি যার দাম ২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা, জমি রেজিস্টার করা পাওয়া যায়। এই সম্পত্তিগুলোতে দেখানো হয় যে মোর্শেদা কুদ্দুসের ভাই আব্দুল রকিব কাজমী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী অবস্থায় বোনকে জমিগুলো দিয়ে যান; যা কিনা পরবর্তী সময়ে অভিযুক্তের স্বামী জিয়াউল হকের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী আব্দুল রকিব তার স্ত্রী-সন্তান অথবা অন্য ভাই-বোনদেরকে কোন সম্পত্তি দান করেন নাই।
তদন্তে উল্লেখ করা হয়, এর থেকে প্রমাণ হয় যে অভিযুক্ত তার স্বামীর অবৈধ সম্পত্তিগোপনের জন্য মৃত্যু পথযাত্রী ভাইকে ব্যবহার করেন। অভিযুক্ত মিসেস মোর্শেদা কুদ্দুস ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করে ২৬ লাখ ১৮ হাজার ৯০০ টাকা আয় করেন। কিন্তু পারিবারিকখাতে খরচ করেছেন মোট এক কোটি ৬২ লাখ ২২ হাজার ৭৬৬ টাকা। যা কিনা আয় থেকে এক কোটি ৩৬ লাখ ৩ হাজার ৮৬৬ টাকা বেশি। তদন্তে উঠে আসে যে অভিযুক্তের এই সকল অবৈধ সম্পত্তি স্বামীর সাথে যোগসাজশে গড়েছেন।
উল্লেখ্য, কর কমিশনার আ জা মু জিয়াউল হক অবসর যাওয়ার আগে রাজশাহী কর অঞ্চল এবং ঢাকা ১৪ ও ৭ কর অঞ্চলের কর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্যও ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও দুদক মামলা করেছে।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/টিআইএম/২৫মার্চ, ২০২৪)