স্পেশালাইজড প্রোডাক্ট রয়েছে টেকনো ড্রাগসের, বিডিং শুরু রোববার
মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমতি পাওয়া ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের নিলাম (বিডিং) শুরু আগামী ২১ শে এপ্রিল রোববার। ওই দিন বিকাল ৪টা থেকে চলবে ২৪ এপ্রিল (বুধবার) বিকাল ৪টা পর্যন্ত। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রুপান্তরিত হওয়া টেকনো ড্রাগস বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
টেকনো ড্রাগসের কোম্পানি সচিব দেবেশীষ দাস গুপ্ত দ্য রিপোর্টকে বলেন, "টেকনো ড্রাগস লিমিটেড জীবনরক্ষাকারী ঔষধ উৎপাদন ও বিক্রয় করছে এবং লাভজনক কোম্পানি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানীর রয়েছে বেশ কিছু স্পেশালইজড প্রোডাক্ট। তাছাড়া কোম্পানী হিউম্যান এবং ভেটেরিনারি মেডিসিনের প্রায় সকল প্রকার ঔষুধ উৎপাদন করে যা কোম্পানীর ভবিষৎ অগ্রগতির পথ আরো সুগম করবে। বর্তমানে কোম্পানির মোট মূলধন প্রায় ৯৪ কোটি টাকা যার মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর ৬৩% সহ পরিচালন পর্ষদের কাছে ৮৮% শেয়ার রয়েছে। লিস্টেড হওয়ার পর আমরা ভালো লভ্যাংশ দেব বলে আশা করছি এবং বর্তমানে যে দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তা কর্মচারিরা রয়েছে তাতে ভবিষ্যতে কোম্পানি আরও সাফল্য অর্জন করবে। তাই বিনিয়োগকারীরা এখানে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন বলে আমরা মনে করি।" তিনি আরো বলেন, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড শুরু থেকেই উন্নতমানের বিশেষায়িত ঔষধ উৎপাদন ও বিতরন করে আসছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জালালউদ্দিন আহমেদ একজন ফামার্সিস্ট। কোম্পানি পরিচালক মেহেরিন আহমেদ ওনকোলোজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তা কর্মচারিরা কোম্পানিতে দক্ষতার সাথে কাজ করছে। আমরা প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের টেন্ডারের বিপরীতে সর্বোচ্চ পরিমান জন্ম নিয়ন্ত্রন ঔষধ সরবরাহ করছি। এছাড়া আমাদের ১৭ টি ডিপো রয়েছে যার মাধ্যমে সারাদেশে আমরা ঔষধ সরবরাহ করতেছি। তাছাড়া কোম্পানীর রয়েছে প্রতিটি স্তরে “সার্বক্ষনিক মনিটরিং টিম” যারা কোম্পানীর প্রতিটি কাজের সঠিক মনিটরিং নিশ্চিত করে থাকে। আমি বিশ্বাস করি এসব কারণেই আমাদের কোম্পানির সুনাম অক্ষুন্ন রয়েছে।
কোম্পানি সুত্রে জানা যায়, টেকনো ড্রাগস বিশেষায়িত প্রোডাক্ট নিয়েই কাজ করছে।ক্যান্সারের ক্যামোথেরাপি, জন্মনিয়ন্ত্রক পিলের পাশাপাশি রয়েছে কোম্পানিটির চেতনানাশক ঔষধ। ইমপ্লান্ট স্টিক (Implant stick) নামক এক ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রক পিল রয়েছে কোম্পানিটির যা ৫ বছরের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এটি বাংলাদেশে একমাত্র টেকনো ড্রাগসই উৎপাদন করছে বলে কোম্পানি সুত্রে জানা যায়। এছাড়া ভেটেনারি ও সাধারন হিউম্যান মেডিসিনও রয়েছে টেকনো ড্রাগসের। সাধারন হিউম্যান মেডিসিনের মধ্যে মটিলিক্স সাসপেনশন(Motilex Suspension), অমসেক(Omsec), রোমিলাক (Romilac),কেফিসন ইঞ্জেকশন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এন্টি ক্যান্সার ঔষধের মধ্যে হারটিন (Hertin), জোলমাইড (Zolomide), এপোসাইড (Eposide) টেকনো ড্রাগসের প্রধানতম ঔষধ। চেতনানাশক ঔষধের মধ্যে লিডোসেন প্লাস (Lidocaine plus), ভেনকেরিন ১০ (Vencuron-10) কোম্পানিটির প্রচলিত ঔষধ। এছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রন মেডিসিনের মধ্যে থার্ড জেনারেশন ওরাল পিল ও প্রভেরা ইঞ্জেকশন উল্লেখযোগ্য। ভেটেনারি মেডিসিনের মধ্যে ভারমেইক, ডেক্সাভেট, রুমেন প্লাস এসব উল্লেখযোগ্য ঔষধসামগ্রী। কোম্পানি সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো, তবে এলসি সমস্যা, ব্যাংক সুদ হার বেশি সবোর্পরি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দূরবস্থার কারনে ভালোমানের ঔষধের কাচাঁমাল আমদানি করে মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেওয়াটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। নানা ভেজাল ঔষধের ভিড়ে ব্যবসায় করা চ্যালেঞ্জ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে টেকনো ড্রাগসের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ড্রাগ এডমিনিসট্রেসন ও জিএমপি সহ অন্যান্য রেগুলটরি গাইডলাইন মেনে মানসম্মত্ত ঔষধ উৎপাদন ও বিতরন করে বিধায় ভেজাল মেডিসিনের ভিড়ে আমরা কোন চ্যালেঞ্জ মনে করি না। পুঁজিবাজারে আসার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর্পোরেট গর্ভানেন্স এর পুনার্ঙ্গ প্রতিফলন, কর্মসংস্খান সৃষ্টি, আইপিও ফান্ডের এর মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারনই পুঁজিবাজারে আসার মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান, সবোর্পরি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং দেশের ঔষধ শিল্পে উৎপাদিত ঔষধ বহিবিশ্বে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের সুনাম অর্জন করাই কোম্পানির মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, কোম্পানিটি উত্তোলন করা অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিএমআরই (নরসিংদী ফ্যাক্টরি), ভবন নির্মাণ (গাজীপুর ফ্যাক্টরি), আংশিক ঋণ পরিশোধ এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খরচ খাতে ব্যয় করবে। কোম্পানিটির ৩০শে জুন ২০২৩ সালের আর্থিক বিবরনী অনুযায়ী পুনঃমূল্যায়ন সহ শেয়ার প্রতি নীট সম্পদ মূল্য ২৭ টাকা ৭৪ পয়সা। পুন’মূল্যায়ন ছাড়া শেয়ার প্রতি নীট সম্পদ মূল্য ২২ টাকা ৫৭ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ২ টাকা ৮ পয়সা এবং বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে শেয়ার প্রতি আয় ৩ টাকা ২৫ পয়সা ৷ টেকনো ড্রাগস লিমিটেড কাট অফ প্রাইসের ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্টে সাধারণ বিনিয়োগকারীর নিকট শেয়ার ইস্যু করবে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড এবং ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/মাহা/সতের এপ্রিল দুইহাজার চব্বিশ)