সারাদেশে হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের মানুষের নাজেহাল অবস্থা। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। অনেকে গরম সহ্য করতে না পেরে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুবরণও করছেন। বুধবার (২৪ এপ্রিল) সারাদেশে হিটস্ট্রোকে চারজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য, বরগুনায় শ্রমিক মো. নয়া মিয়া ফকির (৫৫), কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ৭০ বছর বয়সি নজির হোসেন এবং রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল ইসলাম (৭৫) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য মারা যান। তীব্র তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তার স্বজনরা। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক আসিফ বিন আলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তূর্য অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন বলে তার পরিবার ও স্বজনরা ধারণা করছেন। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০২তম ব্যাচের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে বরগুনার তালতলীতে পুকুর খননের সময় তীব্র দাবদাহে হিটস্ট্রোক করে মো. নয়া মিয়া ফকির (৫৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের খোট্টার চর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিক মো. নয়া মিয়া ফকির খোট্টার চর এলাকার আমির আলী ফকিরের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের খোট্টার চর গ্রামের মো. হাসান মিয়ার বাড়িতে পুকুর খননের কাজ করতে যান মো. নয়া মিয়া ফকির। পুকুর খননের সময় হিটস্ট্রোক করেন তিনি। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
নিহতের ভাই মো. সোবাহান ফকির বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় সকালে পুকুর খননের কাজ করতে গিয়ে হিটস্ট্রোক করেন তিনি। পরে তাকে আমরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে হিটস্ট্রোকে নুরুল ইসলাম (৭৫) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বাড়ি গোয়ালন্দ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে নুরুল ইসলাম তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বাড়ির দৈনন্দিন কাজ করছিলেন। এসময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারসিম তারান্নুম হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই ব্যক্তি ডায়াবেটিকস ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এ অবস্থার মধ্যে তিনি রোদে দীর্ঘক্ষণ থাকায় পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়ে স্ট্রোক করে। তাকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে ৭০ বছর বয়সি নজির হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার রমনা ইউনিয়নের রমনা ব্যাপারীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রোকোনুজ্জামান সরকার জানান। রোকোনুজ্জামান বলেন, নজির হোসেনের বসতভিটা চিলমারী নৌ-বন্দর সম্প্রসারণ কাজে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণ করা হবে। এ নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। তিনি বলেন, এছাড়া আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে তিনি বারবার পানি খাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পরে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান। হিটস্ট্রোকের কারণে তার মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা এই ইউপি সদস্যের।