বেরোবিতে আইন লঙ্ঘন করে জুনিয়র শিক্ষককে সিন্ডিকেট সদস্য পদে মনোনয়ন দিলেন উপাচার্য!
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2024/05/24/images-2.jpg)
বেরোবি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন লঙ্ঘন করে দুইজন জুনিয়র শিক্ষককে ‘পরিচালক’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট এর সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ।
সিন্ডিকেট সদস্য মনোনয়ন পাওয়া ওই দুই শিক্ষক হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বহিরাঙ্গণ কার্যক্রমের পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং ভুগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ছাত্র পরামর্শ-নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম। তাঁরা ক্যাম্পাসে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত এবং দুজনই শিক্ষক নেতা। তাদের একজন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছের বলে প্রচারনা আছে এবং অপর জন এক সচিবের মেয়ের স্বামী।
বিশ্ববিদ্যালয়েসিন্ডিকেট এর একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, গত ১৬ মে ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট এর ১০২তম সভায় উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সভাপতির প্রস্তাবে বেগম রোকেয়াবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ২০০৯ এর ধারা ২১ (১) এর ট অনুযায়ী পরিচালক ক্যাটাগরিতে দুই জুনিয়র শিক্ষককে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ওই আইনে বলা আছে ‘সিন্ডিকেট কর্তৃক পালাক্রমে মনোনীত দুইজন পরিচালক’ সদস্য হইবেন। উক্ত আইন অনুযায়ীবিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত একাডেমিক পরিচালক অর্থাৎ বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকগণের মধ্য হতে সিন্ডিকেট সদস্য মনোনয়ন পাওয়ার কথা। কারন, বেগম রোকেয়াবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ২০০৯ এর ধারা ২(১৫) এ বলা আছে ‘পরিচালক’ অর্থ ইনস্টিটিউটের পরিচালক। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে উপাচার্যের ঘনিষ্ট দুইজন কনিষ্ট দপ্তর পরিচালককে মনোনয়ন দিয়েছেন।
তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া আইনের ব্যত্যয় হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সিন্ডিকেট এর ওই সদস্যবৃন্দ বলেন, বিষয়টি উপাচার্যের উপর নির্ভর করে। সভাপতি হিসেবে তিনি যেভাবে প্রস্তাব করেছেন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইন লঙ্ঘন হয়েছে কিনা তিনি ভালো বলতে পারবেন।’
আইন লঙ্ঘন করে পরিচালক ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য মনোনয়ন দেয়া হলেও এই আইনের ঞ উপধারা অনুযায়ী ডিনগণের মধ্য হতে সদস্য মনোনয়ন বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই ক্যাটাগরিতে সদস্য পদ দুটির মেয়াদ গত বছরের জুন মাসে শেষ হলেও নতুন করে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ফলে একাডেমিক শাখায় সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েও সিন্ডিকেট সদস্য হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ডিন এর দায়িত্ব পালন করা শিক্ষকবৃন্দ। ইতোমধ্যে এই সময়ের মধ্যে ডিন হিসেবে অনেকের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করেছেন। ফলে পুরো শিক্ষকতা জীবনে আর কখনো তারা এই পদে আসীন নাও হতে পারেন। এ ঘটনায় শিক্ষকবৃন্দ ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। শিক্ষক সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়েসূত্র জানায়,বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আট থেকে ১০ জন পরিচালক কর্মরত আছেন। এগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে উপাচার্য নিজেই পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. আর এম হাফিজুর রহমান ২০১৮ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন, আইকিউএসি এর পরিচালক হিসেবে প্রফেসর ড. একেএম ফরিদ উল ইসলাম ২০২২ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন, ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক হিসেবে ২০২২ সাল থেকে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক, ই-লার্নিং সেন্টারের পরিচালক হিসেবে ২০২৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু রেজা মোঃ তৌফিকুল ইসলাম, গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ থেকে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইদুল হক, গত মার্চ মাস থেকে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, পরিবহনপুলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. মোঃ কামরুজ্জামান।
এই পরিচালকগণের প্রত্যেকে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং সৈয়দ আনোয়ারুল আজিমের চেয়ে সিনিয়র শিক্ষক এবং পরিচালক হিসেবে জ্যেষ্ঠ। তারা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গত ৮ মে। এছাড়াও এইবিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ২৬ জন অধ্যাপক এবং ৮০ জন এর অধিক সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে তারা সবচেয়ে জুনিয়র।
এত জুনিয়র দুইজন শিক্ষককেবিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষক। এর আগেও এই দুই শিক্ষককে সহকারী অধ্যাপক থাকাকালে দপ্তর দুটিতে পরিচালকের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয় এর আগে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীকে বিশ^বিদ্যালয়ের অন্য গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম অর্থ কমিটির সদস্য বানিয়েছেন উপাচার্য হাসিবুর রশীদ।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর আস্থাভাজন বলে ক্যাম্পাসে প্রচারণা থাকায় উপাচার্য তার কথার বাইরে কোন কাজ করেন না বলেও অভিযোগ আছে। এদিকে অপর শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম এক সচিবের মেয়ের স্বামী হওয়ার তিনিও প্রশাসনের উপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করার সময় একই ব্যাংক ড্রাফট জালিয়াতি করে দুই বার ব্যবহার করেছিলেন। এ বিষয়ে ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্লানিং কমিটির ৪৪তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে ওই দুই শিক্ষকের কেউই গনমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হন নি।
এমন দুইজন বিতর্কিত ও জুনিয়র শিক্ষককে সিন্ডিকেট সদস্য বানানোয় ক্যাম্পাসে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে উপাচার্য বিভিন্ন অনিয়মকে সমর্থন দেয়ার জন্য তাঁর আজ্ঞাবহ দুই শিক্ষককে সিন্ডিকেট সদস্য বানালেন বলে অনেকে ধারণা করছে।
এ বিষয়ে,সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ মতিউর রহমান’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি “দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টি ফোর ডট কম”-কে জানান আইন মেনেইসিন্ডিকেট সদস্য বানানো হয়েছে, যদিজুনিয়র কোন শিক্ষককে সিন্ডিকেট সদস্য করা হয়, এ বিষয়ে সদস্যদের কিছু করার নেই।
এএইচ/এসকে/দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টি ফোর ডট কম।