দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সিডর, আইলা, নার্গিস, ফণি, বুলবুল, আম্পান, মখার মতো ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতও বুক পেতে নিয়ে উপকূলকে রক্ষা করলো প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন। ঝড়ের সামনে লড়াই করে বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই ম্যানগ্রোভ বন।

 

বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবন পৃথিবীর অনন্য সম্পদ। মাকড়সার জালের মতো ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদীতে বেষ্টিত সুন্দরবন কতবার যে ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তারই ধারাবাহিকতায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ থেকে রক্ষায় এবারও বুক পেতে দিল সুন্দরবন। বাংলাদেশে এই ঝড় প্রবেশের মুখেই সুন্দরবনের অবস্থান। এর কারণে ঝড় প্রবেশ করতেই বনে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। যেন সুন্দরবনের জন্মই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য।

সুন্দরবন দেশের উপকূলকে কালাপাহাড়ের মতো আগলে রেখেছে সবসময়। সুন্দরী-গেওয়াসহ নানা বৃক্ষের মজবুত বেষ্টনী আর অসংখ্য নদীনালা বছরের পর বছর ধরে প্রাণী ও সম্পদ রক্ষা করে আসছে। নিজে ক্ষত-বিক্ষত হলেও উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয়নি এই বন। সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল কয়রার উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। তবে এবারও ঢাল হয়ে উপকূলকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে বাধা না পেলে ঝড়ের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবচ। সুন্দরবনের জন্মইহয়েছে আমাদের রক্ষা করার জন্য। সুন্দরবন না থাকলে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বড় ধরনের তাণ্ডব হতে পারতো। বরাবরের মতো এবারও সুন্দরবন ঝড়ের গতি কমিয়ে দিয়েছে। অথচ এ সুন্দরবন আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলছি। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দে বলেন, সুন্দরবনের অনেক এলাকা ৮-১০ ফুট জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে সুন্দরবনের মধ্যে যে মিষ্টি পানের পুকুর ছিল তা ডুবে গেছে। পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। কটকাতে বড় কাঠে জেটি ছিল তা জলোচ্ছ্বাসের সময় ভেঙে গেছে। সুন্দরবনের কারণে এবারও ঝড়ের বাতাসের গতি কমেছে। তবে সিডরের মতো এবার ততো গাছের ক্ষতি হয়নি। কিছু ক্ষতি হয়েছে। ঝড় কমে গেলে বনে গিয়ে কতটা ক্ষতি হয়েছে তা বোঝা যাবে। নদী এখনও উত্তাল।