বিজিবি সীমান্তে নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক: ডিজি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি উল্লেখ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক, প্রকৃত বীরযোদ্ধা। বিজিবির চারটি মূলমন্ত্র রয়েছে।
‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’ এগুলো হৃদয়ে ধারণ করে সবাই (নবীন সৈনিকরা) এই বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে। বিজিবি হবে ‘সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক’।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বাহিনীর ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে বিজিবি মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত প্রহরার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করা। বিজিবি হবে ‘সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক’। আর এজন্য সততা ও সত্যবাদিতা, আনুগত্য, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা এই চারটি গুণের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে নবীনদের গড়ে উঠতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ০৫ ডিসেম্বর বাহিনীর তৃতীয় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের বিদায়লগ্নে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘যারা নতুন আজকে বিডিআর-এ যোগদান করেছো, যারা শপথ গ্রহণ করলা, তাদের কাছে আমার কথা রইলো- ঈমানের সঙ্গে কাজ করো, সৎপথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো। ’
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সীমান্তের চোরাচালান রোধের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচার প্রতিরোধে এবং নারী ও শিশু পাচার রোধেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখবেন সীমান্তের কার্যক্রম দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। এবিষয়ে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে হবে।
অনৈতিক অর্থ উপার্জন এবং শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে দুরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বিজিবি প্রধান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে ভূমিকা পালন করছেন। মনে রেখো বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহীয়সী নারীদের আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমরা বিজিবির সার্বিকভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আরও গতিশীল ভূমিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
দেশের অগ্রযাত্রায় যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তিনি হলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একজন নারী, তার অপরিসীম দৃঢ় নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেও যোগ করেন বিজিবি মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী সাফল্যের পথ পরিক্রমায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ এবং নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক সহায়তা প্রদান এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় এই বাহিনী একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, এপিসি, এটিভি, আরসিভি, এয়ার বোট, অত্যাধুনিক অ্যান্টি ট্যাংক অস্ত্র, জলযানসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি। বিজিবি আজ একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। এ বাহিনীর সদস্যদের অভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রশিক্ষণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গায় আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত আরও একটি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের সর্ববিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৩০৬ রিক্রুট (জিডি) মো. মিনহাজ হোসেন রাফি, শারীরিক উৎকর্ষ (পুরুষ) প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৬৩২ সিপাহী আবু হুরায়রা ও সর্ববিষয়ে তৃতীয় ও শারীরিক উৎকর্ষ (নারী) বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৭১৬ সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম এবং ফায়ারিং-এ শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বক্ষ নম্বর-৬৪১ সিপাহী মো. শাহিন উদ্দিনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকস দল কর্তৃক বিজিবি মহাপরিচালককে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সব শেষে বিজিবির প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবির সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
বিজিবির ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি)-তে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৫৫৬ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫২০ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন।
দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।
নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বিজিবি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনী, স্থানীয় অসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।