কোটাবিরোধী আন্দোলনের অবসানের উপায় বের করার চেষ্টা করছে সরকার
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কোটাবিরোধী চলমান ছাত্র আন্দোলনের দ্রুত অবসানের উপায় বের করার চেষ্টা করছে সরকার। এ আন্দোলন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় সরকারের মধ্যে উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে।
তবে বিষয়টি আদালতে অবস্থান করায় এ মুহূর্তে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না সরকার।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ইতোমধ্যেই জোরালো হয়ে উঠেছে এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল হয়। এ কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, ধর্মঘটসহ আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। সোমবারও (৮ জুলাই) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল ব্যাহত হয় এবং জনসাধারণকে সংকটে পড়তে হয়। এ আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ে তীব্র হতে পারে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা ও সমাধানের পথ বের করার উপায় নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, প্রথম দিকে সরকার বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। কিন্তু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় এবং তা জোরালো হয়ে ওঠায় সরকার সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে বিএনপি সমর্থন দেওয়ায় বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি ঘোষণা দিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের উসকানি ও জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টাও হতে পারে এমন ধারণাও করা হচ্ছে। আন্দোলনকে বিএনপির সমর্থনের মধ্য দিয়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের এ আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।
সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে পক্ষ নিতে পারে না। বিএনপি প্রকাশ্যে এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে, তাই নতুন করে বলার কিছু নেই।
এর আগের দিন এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সময় মতো সমাধান হয়ে যাবে। আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি ও সম্ভাবনা কয়েকটি দল পরজীবী আন্দোলন করছে। কোটা ও পেনশনের ওপর ভর করেছে। তারা ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছে পরজীবী আন্দোলনকে ভর করে।
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবন করে সোমবার দুপুরে ওবায়দুল কাদেরসহ পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাপা ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কোটা আন্দোলনের বিষয় ও আন্দোলনের গতিবিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। দ্রুতই আন্দোলনের অবসানের জন্য কী করণীয় বা উদ্যোগ নেওয়া যায় সে বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। আবার যেহেতু উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে এবং সরকার কোটা বাতিলের জন্য আপিলও করেছে এবং বিষয়টি আদালতে অবস্থান করছে তাই সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগও নেওয়া যাচ্ছে না। আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আদালতের রায়ের পর সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি যাতে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত বা অস্থিতিশীল না হয় সে বিষয়টি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। সোমবার পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।
পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের পর কোটাবিরোধী আন্দোলন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আদালতে যে বিষয়টি বিচারাধীন আছে, আমরা এ বিষয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করবো না। সেটা আদালতের বিষয়। অপেক্ষা করতে হবে। সরকার তো আপিল করেছে। সুতরাং আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করবো না।