দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ছাত্রলীগ আবারও সন্ত্রাসী ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সোমবার (১৫ জুলাই) বিকালে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

 

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হেলমেট পড়ে সশস্ত্র হামলা ও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করেছে দাবি করে বলা হয়, এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের এমন ন্যাক্কারজনক ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করছে। এই সংগঠনটি এখন ছাত্রসমাজের জন্য অভিশাপ ও কলঙ্ক। তারা সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে অবৈধ সরকার।

ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান সোমবার (১৫ জুলাই ২০২৩) এক বিবৃতিতে বলেন, আজ বেশ কয়েকদিন ধরে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে যৌক্তিক ও ন্যায্য আন্দোলন করে আসছেন দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ৫৬ ভাগ কোটা বিশ্বের কোনো দেশে নেই। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে কেন কোটা থাকবে?

তারা বলেন, গত রবিবার (১৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর পরিষ্কার হয়েছে যে অবৈধ সরকারের কাছে কোনও যৌক্তিক দাবি গ্রাহ্য নয়। ফলে সোমবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কোমলমতি নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র ও ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত, অছাত্র ও টোকাইদের ঢাবি ক্যাম্পসে জড়ো করা হয়। পরে তাদের হাতে অস্ত্র, লাঠি, লোহার পাইপ, হকিস্টিক এবং স্ট্যাম্প তুলে দিয়েছে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরপরই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর জঘন্যভাবে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নির্মম আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি নিরীহ নারী শিক্ষার্থীরাও। ছাত্রলীগের এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত ন্যাক্কারজন ও জঘন্য।

ইউট্যাবের নেতারা বলেন, ঢাবি ক্যাম্পাসের ভেতরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নির্মম ও সশস্ত্র হামলা চালালেও ঢাবি কর্তৃপক্ষের কোনও ভূমিকা চোখে পড়েনি। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ছিল উদাসীন। আমরা মনে করি ঢাবি কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন নির্বিকার ভূমিকায় জাতি হতভম্ব ও লজ্জিত। তার মানে এই যে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ ও রক্তাক্ত করা হয়েছে।

তারা আরও বলেন, এমনিতেই গত ১৫ বছর ধরে দেশের শিক্ষাঙ্গনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নিপীড়ন ও নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করছে। সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে চরম নৈরাজ্য ও শিক্ষার্থী নিপীড়ন করছে ছাত্রলীগ। তারা সরকারি দলের প্রত্যক্ষ মদদে একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। চুরি, ছিনতাই, খুনসহ নানা ধরনের অন্যায় করলেও দোষিদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। দেশজুড়ে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর একের পর এক যে নিপীড়ন আর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তা রীতিমত মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ছাত্রলীগের এহেন কর্মকাণ্ডে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব মনে করছি। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই।