দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে দুজন নিহতের তথ‌্য দি‌য়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বক্তব্য দি‌য়ে‌ছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

 

কোটা আন্দোলন নি‌য়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের প্রতিক্রিয়ায় আমরা অত্যন্ত হতাশ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ওয়াশিংটনে গতকাল (সোমবার) দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন, এটা ভিত্তিহীন। এমন ভিত্তিহীন অযাচাইকৃত তথ্যের ব্যবহার সহিংসতা বাড়াতে পারে এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, অহিংস প্রতিবাদ বা আন্দোলনের অনুমতি দেয়ার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আমাদের গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। বাংলাদেশ সরকার সেই অধিকার সমুন্নত রাখতে অবিচল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহিংসতা কখনই গণতন্ত্র ও রাজনীতির অংশ হতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনা দেখেছি। বাংলাদেশ এ ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ধরনের ঘটনা গণতন্ত্রে মূলভিত্তির উপর আঘাত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে ট্রাম্পের সুস্থতার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ধারা রক্ষায় বাংলাদেশ মার্কিন সরকারের সাথে কাজ করে যাবে বলেও জানান পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

এর আগে, গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশি এক সংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এসময় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী আহত ও দুইজনের মৃত্যুর কথা জানান মার্কিন পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে। হামলায় শত শত মানুষ আহত হয়েছেন ও দুজন নিহত হয়েছেন। আমরা এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সোমবার কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগের। দুপক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাবি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ আশপাশের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় এ হামলা করা হয়। এরপর ভোর পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। গভীর রাতে ছাত্রলীগের সঙ্গে বহিরাগতরা যোগ দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে। হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও সাংবাদিককে মারধর করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আহতদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম (মেঘ), বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ (জিতু), সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আয়শা সিদ্দিকা বৃষ্টি, যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোসাদ্দেকুর রহমান, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার। এ ছাড়া একটি স্লোগান কেন্দ্র করে জাবির ৪ শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে হেনস্তা ও ফোন তল্লাশি করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফায় হামলা চালিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মাহবুবুর রহমান নামে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং চার শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া আন্দোলনে চবির সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের মিছিলে যুক্ত করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ৪ নেতাকর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। আহত চার নেতা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র যুবআন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হাসান ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনু মোহন বাপ্পা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স হোসেন রাঈল। এর আগে বিকেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শাখা ছাত্রলীগ।

এ ছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজে কোটাবিরোধীদের ওপর হামলা হয়েছে।