সাকিল আহমাদ, দ্য রি‌পোর্ট: চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। সহিংসতা থামাতে সরকার সারা দেশে গণগ্রেফতার করছে। এই পর্যন্ত প্রায় পনের হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

এসব গ্রেফতারের বেশিরভাগই করা হচ্ছে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় সন্দেহের বশবর্তী হয়ে। একইসঙ্গে পুলিশের এফআইএর এ অন্তর্ভূক্ত অজ্ঞাত আসামী হিসেবে গ্রেফতার হচ্ছে সাধারণ মানুষ,শিক্ষার্থীরা।

আদালতের ওয়ারেন্ট ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হলে অবশ্যই আইন ও আপিল বিভাগের নির্দেশনা মানতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ করলে সেই ব্যক্তিকে ওয়ারেন্ট ব্যতীত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারে। তবে সেই অভিযোগ বা সন্দেহ যুক্তিসঙ্গত বা তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য সেই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রমাণ করতে হবে এবং আদালতকে সন্তষ্ট করতে হবে।

অপরদিকে ওয়ারেন্ট ব্যতীত গ্রেফতার ও রিমান্ড বিষয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৫৪ ও ১৬৭ নিয়ে রিটের রায়ে সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো-কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তাঁর পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে;গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে আটককৃত ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে;বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে যদি কাউকে আটক করা হয়,তাহলে আটককৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে;আটক ব্যক্তিকে তাঁর পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ দিতে হবে;জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারে কাচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।

উচ্চ আদালত আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে কক্ষের বাইরে তাঁর আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন;কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্ত কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিন দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে;জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে;পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে,ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে,তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাঁকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।

একই সঙ্গে পুলিশ রিমান্ডে নিতে হলে আদালতের নিকট কারণ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে মর্মে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার ও রিমান্ডের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মামুন বলেন,উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও আইন না মানার প্রবণতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, যেটা দু:খজনক।

সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ওনির্বাহী বিভাগ সুপ্রীম কোর্টের রায় ও আদেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার কথা বলা থাকলেও সেটা করছে না,যা বেআইনি অপরাধ বলেও উল্লেখ করেন এই আইনজীবী।

সুপ্রীম কোর্টের আরেক আইনজীবী মো: আনিসুর রহমান বলেন,কারো বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এভাবে ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা বেআইনি। এটি বন্ধ না হলে দেশে আইনের শাসন ভেঙে পড়বে বলেও জানান তিনি।