নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকার নির্দেশ বিএনপির
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সরকার পতনের একদফা দাবিতে ‘ছাত্র-জনতা’র চলমান আন্দোলনকে সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিবসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে সারা দেশে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা কোথায় কী ভূমিকা রাখছেন সে বিষয়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা খোঁজখবর নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানাবেন। এদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতেই আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। এখন এই আন্দোলনে আমাদের শুধু সমর্থন নয়, আমাদের সব রকমের সহযোগিতাও থাকবে। যেহেতু এটা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সেজন্য রাজনৈতিক দল হিসাবে আমাদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য সেই দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করছি। সারা দেশে নেতাকর্মীরাও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে, এ আহ্বান রইল।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকার পতনের এক দফা দাবি এবং বিএনপি ও সমমনা দলের দাবি এক ও অভিন্ন। যেহেতু এই দাবিতে ছাত্র-জনতা, কবি-সাংবাদিক-শিক্ষক-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নেমেছে। কিন্তু এসব মানুষের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠন কোনো ধরনের আক্রমণ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে বিএনপি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে, যা ইতোমধ্যে সারা দেশের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির এক নেতা বলেন, দলীয় নির্দেশনার আগেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্রদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দলের অনেক নেতাকর্মী। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য-শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক স্বজনরাও মাঠে আছেন। এখন সরাসরি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে দলের নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপিও কর্মসূচি দিয়ে দলীয় ব্যানারে রাজপথে থাকবে কি না তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলীয় ব্যানার ছাড়া নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দলীয় সমর্থক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সহযোগী সংগঠন এবং যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমমনা রাজনৈতিক দল ঘোষিত কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। গত কয়েকদিন সে অনুযায়ী কার্যক্রম করেছে দলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আন্দোলনরত ছাত্র-অভিভাবকদের পাশে সক্রিয়ভাবে আছি।’
বিএনপির অপর একজন নেতা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরুর দিকে দলের ৩৫ সিনিয়র নেতাসহ সাধারণ ছাত্র জনতাকে নির্বিচারে গ্রেফতার করে পুলিশ-র্যাব। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও ‘৯০ ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা সানাউল হক নিরুকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি বা তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় নেতাকর্মীরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে বিএনপি ছাড়াও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারাও চলমান সরকার পতন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শনিবার বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের ১২ দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জোটের জরুরি সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এক দফার প্রতি সমর্থনের কথা জানানো হয়েছে।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর বিগত পনেরো বছরের আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। চলমান আন্দোলনও ব্যর্থ হবে না। এই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক মানুষের বিজয় হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবার বিজয়ের এক ঐতিহাসিক মাইলফলকের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা ছাত্র-জনতার পাশে আছি এবং চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকব।’
এছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, এনডিএমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এক দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।