আহত শিক্ষার্থীদের অনুদান দিয়ে শুদ্ধ করার চেস্টা এনআরবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত এনআরবিসি ব্যাংক। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে সরকারি মদদে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির ভোল পাল্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ৪৩ জন আন্দোলনকারীকে ৫০ লক্ষ টাকা চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছে এনআরবিসি ব্যাংকটি।
সোমবার এনআরবিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ সহায়তা প্রদান করা হয়। আহতদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা জানান, ছাত্রজনতার হত্যাকারীর দোসর, তারাই কয়েকদিনের ব্যবধানে ছাত্রদের আর্থিক অনুদান প্রদানের নামে নিজেদের দালাল পরিচয়ের কবর দিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এনআরবিসি ব্যাংক সুত্রে আরো জানা যায়, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়া আর্জু রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, গত সরকারের শাসনামলে ব্যাংকের নানা লুটপাটের সাথে জড়িত ছিলেন তমাল- আর্জু সিন্ডিকেট। নাম না প্রকাশের সুত্রে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা জানান, তমাল ও আর্জুর দুর্নীতির অপর সঙ্গী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম। ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল থেকে আর্থিক দুর্নীতির মহোৎসব চালাচ্ছেন এই তিন কর্মকর্তা। দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের সহায়তায় ঋণ জালিয়াতি, কমিশন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, শেয়ার কারসাজি, মানিলন্ডারিং, বিদেশে অর্থ পাচার, গ্রাহকের কোম্পানী দখলসহ বিবিধ আর্থিক দুর্নীতে লিপ্ত হয়েছেন এই তিন কর্মকর্তা।
ব্যাংকসুত্রে আরো জানা যায়, গত ছাত্র- জনতার গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিলেন এই তিন পরিচালক। গতকাল (সোমবার) ছাত্রজনতার বিপ্লবের এক মাসপূর্তির আগেই নিজেদের শুদ্ধ প্রমাণ করতে ছাত্রদের অনুদান দেন, যা ব্যাংকটির বেশিরভাগ কর্মকর্তা - কর্মচারী ভালো ভাবে গ্রহ করে নি। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা দ্য রিপোর্টকে বলেন, আওয়ামী শাসনামলে যারা ব্যাংকটি লুটপাট করেছে তারা এখনো দায়িত্বে থাকতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। ব্যাংকটি বাঁচাতে সংস্কার কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, এভাবেই দুর্নীতিবাজেরা সত্যকে পরাজিত করে অনুদানের ছায়ায় নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করতে চায়।
ব্যাংক সুত্রে আরো জানা যায়, চেক প্রদান অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তমাল-আর্জু-আদনানের দুর্নীতির দোসর হিসেবে পরিচিত ব্যাংকটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও আরেক পরিচালক ইউরোপীয়ান বিএনপির সাবেক নেতা লকিয়ত উল্লাহ। এদিকে, গতকাল অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে ছাত্রদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও আব্দুল হান্নান মাসুদসহ অন্যান্য আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এসময় বলেন, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রবিউল ইসলাম, ডিএমডি হারুনুর রশীদ ও ডিএমডি হুমায়ুন কবীর।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সোস্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সাইদ আব্দুল্লাহনিজের ফেসবুকে লিখেন, "ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে ছাত্রদের কাছে ইমেজ প্রতিষ্ঠিত করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে টিকে থাকার রাস্তা ক্লিয়ার করার মিশনে আছে এই চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকে তার ঘনিষ্ঠজনরা। আমি দুদক এবং দেশের সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের অনুরোধ করবো এনআরবিসি-র চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে জরুরি তদন্ত শুরু করতে। ঠিকঠাক তদন্ত করলে আরও অনেককিছুই পাবেন বলে আমার ধারণা।"
উল্লেখ্য, এনআরবিসি ব্যাংকের দুর্নীতির তথ্য দ্য রিপোর্টসহ নানা গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ পায়। তবে সরকারি মদদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা ছিলেন বহাল তবিয়তে।