দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর আবার যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর নানা ধরনের কঠিন সমস্যা সত্ত্বেও বেশকিছু সম্ভাবনাও রয়েছে বাংলাদেশের। দেশের জনগণ এখন নৈতিকতার বলে বলীয়ান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। প্রভাবশালী সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর চলতি সংখ্যায় ‘আবার যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রচ্ছদ নিবন্ধে এসব বলা হয়েছে।
সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনটি ‘বাংলাদেশের গুরুত্ব রয়েছে; এ দেশটিকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না’- উল্লেখ করে বলেছে, সুসংবাদ হচ্ছে, দেশটির অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং দেশটির সুশীল সমাজ অনেক বেশি দৃঢ়চেতা।
নিবন্ধে বলা হয়, দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশছাড়ার পর শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পেয়েছে। তার মতো অনেক বাংলাদেশি এটিকে স্বাধীনতা লাভের অর্ধ শতাব্দী পর ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মুহূর্তের অঙ্গীকার পূরণ করতে বাংলাদেশকে এখন পুরোনো স্বৈরাচারীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আরও অনেক কিছু করতে হবে; অবশ্যই নষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রুন্ধ্র রুন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি, রাজনৈতিক গোষ্ঠীতন্ত্র ও দুর্বল প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর কারণে দেশের অগ্রগতি থমকে গেছে। সেইসঙ্গে নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে আড়ষ্টতা রাজনীতিকে বিষিয়ে তুলেছে।
এতে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে সঠিকভাবে নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরি করা, কিন্তু প্রথমে তাকে শেখ হাসিনার দখলকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন: নির্বাচনি সংস্থা এবং আদালতের (বিচার বিভাগ) সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশটিকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য ড. ইউনূসের কাছে সময় খুবই কম উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, তার সাফল্য বা ব্যর্থতা ১৭ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশির জীবনযাত্রার সফলতা নির্ধারণ করবে। একইসঙ্গে চীন, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ড. ইউনূস একটি অত্যন্ত কঠিন কাজের মুখোমুখী। তার অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা উচিত আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঢেউ প্রতিরোধ করা, যা অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। তাকে টেকনোক্র্যাট পরিচালিত এমন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং সব রাজনৈতিক দল, এমনকি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্বও থাকবে।
ইউনূসকে দ্রুত কাজ করার পরামর্শ দিয়ে নিবন্ধটিতে বলা হয়, অনির্বাচিত কেয়ারটেকার সরকারের খুব বেশিদিন ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ নেই, কারণ তাতে তারা বৈধতা হারাতে বা আরও খারাপ কিছু হতে পারে অথবা এর সামরিক সমর্থকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে প্রলুব্ধ হতে পারে।
ম্যাগাজিনটি সতর্ক করেছে, দেশটি পাকিস্তানের মতো ইসলামপন্থিদের শিকার হতে পারে। আর্থিক টানাটানি খারাপ হলে বাংলাদেশ সস্তা ঋণ ও অস্ত্রের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। যার ফলে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্থিতিশীল হতে পারে এবং গণতন্ত্র আরও বিনষ্ট হতে পারে।
নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, যখন অর্থনীতির কথা আসে, তখন সরকারের উচিত ব্যালেন্স-অফ-পেমেন্ট ঝুঁকির উৎকণ্ঠা কমাতে বাইরে থেকে আরও তহবিল জোগাড় করা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন বাণিজ্য চুক্তির জন্য চেষ্টা করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ড. ইউনূসকে অবশ্যই দেশের তরুণ সমাজ, ক্রমবিকাশমান এবং ক্রমবর্ধমান শহুরে জনসংখ্যার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নেতাদের কাছে নতুন ধারণার ব্যাপারে নিজেকে উন্মুক্ত করার আহ্বান জানাতে হবে।
সাময়িকীটিতে অবশ্য বাংলাদেশে কর্তত্ববাদী শাসনকে সহায়তা করার জন্য ভারতকে দায়ী করে বলেছে, যদি দেশটি একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশী চায় তবে কিছু কাজ করার দরকার হবে; দেশটির উচিৎ হবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আহ্বান জানানো এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া।