বিএনপির তিন নেতা এখন এনআরবিসির আইনগত ব্যাপার দেখভাল করবেন!
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: এবার বিএনপি তিন নেতার সরণাপন্ন হলেন এনআরবিসি ব্যাংক। নানা দুর্নীতির অভিযোগে পরিচিত এই ব্যাংকটি এবার লিগ্যাল রিটেইনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি তিন নেতার লিগ্যাল এডভাইকরি ফার্মকে।
দ্য রিপোর্টের হাতে আসা তিন ফার্মের নিয়োগপত্র থেকে জানা যায় গত মাসের ১৪ তারিখ বিএনপি তিন নেতার ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে ব্যাংকটি। নাম না প্রকাশের শর্তে ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও আরেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যাংকটির অতীতের সকল অপকর্ম থেকে বাঁচতে বিএনপি নেতাদের সরপান্ন হচ্ছেন।
সুত্রের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত তিন বিএনপি নেতার কাছে আশ্রয় খুঁজছে ব্যাংকটি। সুত্রমতে, এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন ফারুকের প্রতিষ্ঠান জয়নুল আবেদিন এন্ড এসোসিয়েটস ও ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের প্রতিষ্ঠান মাহবুব এন্ড কোম্পানীকে ব্যাংকের লিগ্যাল রিটেইনার হিসেবে গত ১৪ই আগস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অরেক বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গত ৩রা সেপ্টেম্বর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের রিটেইনার নিয়োগের বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে দেয়া হলেও, তড়িঘড়ি করে পর্ষদ মিটিংয়ের আগেই এই তিন নেতাকে মাসিক ৭৫ হাজার টাকা সম্মানীতে ১ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকসুত্রে জানা যায়, ব্যাংক চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়াঁ আর্জু ও এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম নিজেদের দুর্নীতি বাঁচাতে এধরনের নেতাদের নিয়ে আশ্রয় খুঁজছেন।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরেএ ২ তারিখ এনআরবিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ৪৩ জন আন্দোলনকারীকে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল থেকে ৫০ লক্ষ টাকা চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছে এনআরবিসি ব্যাংকটি
তবে ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, গত সরকারের শাসনামলে ব্যাংকের নানা লুটপাটের সাথে জড়িত ছিলেন তমাল-আর্জু-আদনান সিন্ডিকেট। ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল থেকে আর্থিক দুর্নীতির মহোৎসব চালাচ্ছেন এই তিন পরিচালক ও তাদের পোষ্য কর্মকর্তারা। দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের সহায়তায় ঋণ জালিয়াতি, কমিশন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, শেয়ার কারসাজি, মানিলন্ডারিং, বিদেশে অর্থ পাচার, গ্রাহকের কোম্পানী দখলসহ বিবিধ আর্থিক দুর্নীতে লিপ্ত হয়েছেন এই তিন পরিচালক।
ব্যাংকসুত্রে আরো জানা যায়, গত ছাত্র- জনতার গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর ০২ সেপ্টেম্বর সোমবার পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিলেন এই তিন পরিচালক। সোমবার ছাত্রজনতার বিপ্লবের এক মাসপূর্তির আগেই নিজেদের শুদ্ধ প্রমাণ করতে ছাত্রদের অনুদান দেন, যা ব্যাংকটির বেশিরভাগ কর্মকর্তা - কর্মচারী ভালোভাবে গ্রহন করেনি। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা দ্য রিপোর্টকে বলেন, আওয়ামী শাসনামলে যারা ব্যাংকটি লুটপাট করেছে তারা এখনো দায়িত্বে থাকতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। ব্যাংকটি বাঁচাতে সংস্কার কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, এভাবেই দুর্নীতিবাজেরা সত্যকে পরাজিত করে অনুদানের ছায়ায় নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করতে চায়।
ব্যাংক সুত্রে আরো জানা যায়, চেক প্রদান অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তমাল-আর্জু-আদনানের দুর্নীতির দোসর হিসেবে পরিচিত ব্যাংকটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও আরেক পরিচালক ইউরোপীয়ান বিএনপির সাবেক নেতা লকিয়ত উল্লাহ। এদিকে, গতকাল অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে ছাত্রদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও আব্দুল হান্নান মাসুদসহ অন্যান্য আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এসময় বলেন, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রবিউল ইসলাম, ডিএমডি হারুনুর রশীদ ও ডিএমডি হুমায়ুন কবীর।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সোস্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সাইদ আব্দুল্লাহ নিজের ফেসবুকে লিখেন, "ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে ছাত্রদের কাছে ইমেজ প্রতিষ্ঠিত করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে টিকে থাকার রাস্তা ক্লিয়ার করার মিশনে আছে এই চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকে তার ঘনিষ্ঠজনরা। আমি দুদক এবং দেশের সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের অনুরোধ করবো এনআরবিসি-র চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে জরুরি তদন্ত শুরু করতে। ঠিকঠাক তদন্ত করলে আরও অনেককিছুই পাবেন বলে আমার ধারণা।"