দ্য  রিপোর্ট প্রতিবেদক:   অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

দুদকের চার্জশিট গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

পরোয়ানা জারি হওয়া অপর আসামিরা হলেন,বাচ্চুর স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না এবং ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক।

দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আজ মামলার চার্জশিট আমলে গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। জামিনে থাকা আসামি হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক ও ক্যাপিটাল বনানী ওয়ান লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে৫ জুন দুদকের সহকারীপরিচালক নেয়ামুল হাসান গাজী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

জানা যায়, বাগেরহাট-১ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি।

সেই মেয়াদের শেষ দিকে ২০১২ সালের ৮ আগস্ট তিনি বেস্ট হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের সঙ্গে গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অধীন ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার লালসরাইস্থিত মৌজার ছয় নম্বরপ্লটের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা ভূমি কেনার জন্য সমঝোতা চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। চুক্তি অনুযায়ী মূল্য ধরা হয় ১১০ কোটি টাকা।

পরে চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর দুটি দলিল মোতাবেক ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। এরমধ্যে ৮০৮৮৫ নম্বরদলিলে ১৮ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি হয়। এরমূল্য ধরা হয় ৯ কোটি টাকা। এই দলিলের গ্রহীতারা হলেন,শেখ আবদুল হাই বাচ্চু, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না ও স্ত্রী মিসেস শিরিন আক্তার। অপরদিকে ৮০৮৮৬ নম্বরদলিলে ১২ দশমিক ২৫ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। এরমূল্য ধরা হয় ৬ কোটি ২৫ লাখটাকা। এই দলিলের গ্রহীতা আবদুল হাই বাচ্চুর দুই ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। তাই দুটি দলিলে জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২৫ লাখটাকা।

অথচ জমি ক্রয় বাবদ আসামি শেখ আবদুলহাই বাচ্চু ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে সর্বমোট ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ, অর্থাৎ মোট ১১০ কোটি টাকা আসামি আমিন আহমেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধ করেন। যা আসামি আমিন আহমেদ বুঝে পেয়েছেন মর্মে স্বীকার করেন।

এর মাধ্যমে আসামি শেখ আবদুল হাই বাচ্চু তার স্ত্রী, ভাই ও সন্তানদের নামে ৯৪ কোটি ৭৫ লাখটাকা হস্তান্তার, স্থানান্তর, রূপান্তর, ছদ্মাবরণের মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থ গোপন করেছেন। আর ১১০ কোটি টাকায় ক্রয় করা সত্ত্বেও ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকায় দলিল করে আসামি বাচ্চু সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। আসামি আমিন আহমেদ আসামিবাচ্চুর অবৈধ অর্থ বৈধতা প্রদানে সরাসরি সহায়তা করেছেন। এর মাধ্যমে আসামিরা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলা করেন।