দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ফেনী-নোয়াখালীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিপিডি। তাদের মতে, এ ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৫ শতাংশ হয়েছে কৃষিতে।

বাকি ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামো, শিক্ষা ও অন্যান্য খাতে।

 

রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে ‘পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া: সিপিডিরবিশ্লেষণ’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি ও বন খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ পাঁচ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।

তিনি জানান, অবকাঠামো খাতে চার হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার এবং ঘরবাড়িতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ৪০৭ কোটি টাকার। জেলা হিসাবে নোয়াখালীতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে। এ জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এরপর আছে কুমিল্লা জেলা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।

গত কয়েকদিনে উত্তরাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যা প্রসঙ্গে ফাহমিদা খাতুন বলেন, পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অনুষ্ঠানে বলেন, এবারই প্রথম বন্যার কারণ ও ক্ষতি নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনার ধারাবাহিকতায় বন্যার কারণ নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যার মাধ্যমে বন্যার কারণ ও ক্ষতি রোধে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

তিনি বলেন, এবারের বন্যা প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন। এবারের বন্যায় নতুন এলাকায় ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি মানবসৃষ্ট হোক বা প্রকৃতিগত হোক, আগামী দিনগুলোতে এ ধরনের বন্যার মুখোমুখি হতে হবে; এই বাস্তবতা মেনে ‍আগামী দিনের দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি সাজাতে হবে।

সিপিডির গবেষণা ফেলো মুনতাসীর কামাল তার উত্থাপিত গবেষণাপত্রে বন্যা প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো—ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি; সামাজিক যেসব নিরাপত্তা কার্যক্রম চলমান আছে তা জোরদার করা; কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ বৃদ্ধি এবং বন্যাজনিত ক্ষতি রোধে কিস্তি দেওয়া স্থগিত রাখা; চালসহ কৃষিপণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা; বন্যা প্রতিরোধে মাটির পরিবর্তে উচ্চমানের বাঁধ নির্মাণ করা; উপকূলে নির্মিত বাঁধগুলো আরও উঁচু করা; ত্রাণ সরবরাহ জোরদার ও বিকল্প বা জলযানের ব্যবস্থা করা; জলবায়ুর পূর্বাভাস ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা; সরকারি এজেন্সিগুলোর মধ্যে রিয়েলটাইম তথ্য সরবরাহ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ডাটা সরবরাহ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।