দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলির দাহিয়েহ অঞ্চলে গত বৃহস্পতিবার শেষ রাতে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য প্রধান হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।  সেইদিনের পর থেকে সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করে। 

 

এবার সেই সাফিয়েদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে লেবাননের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে চাইলে হিজবুল্লাহর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন।

মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘লেবানন একটি দীর্ঘ যুদ্ধের অতল গহ্বরে পতিত হবে। যা দেশটিকে ধ্বংসযজ্ঞ ও দুর্ভোগের দিকে নিয়ে যাবে, যেমনটা আমরা গাজায় দেখছি। তবে আপনাদের সামনে লেবাননকে রক্ষা করার সুযোগ এসেছে।’

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি লেবাননের মানুষদের এটাই বলতে পারি, নিজেদের দেশকে হিজবুল্লাহর কবল থেকে মুক্ত করুন। এতেই এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটতে পারে।’

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহর সক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছি। আমরা হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছি। যার মধ্যে (হাসান) নাসরুল্লাহ নিজেও রয়েছেন। নাসরুল্লাহর উত্তরসূরি এবং তার উত্তরসূরির উত্তরসূরিও নিহত হয়েছেন।’ তবে পরের দুজনের নাম উল্লেখ করেননি নেতানিয়াহু।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজ হিজবুল্লাহ বহু, বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে’।

একইদিন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সামরিক বাহিনীর অফিসারদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভিডিওবার্তায় বলেন, নাসরুল্লাহর উত্তরসূরি সম্ভবত নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহ এখন একটি নেতৃত্বহীন সংগঠন।

তিনি আরও বলেন, ‘হিজবুল্লাহর এখন কেউ সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেই, কেউ কাজ করার নেই।’

পরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, গত সপ্তাহে যখন যুদ্ধবিমান বোমা বর্ষণ করেছিল তখন ইসরাইল জানত সাফিয়েদ্দিন হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দফতরে ছিল এবং সাফিয়েদ্দিনের অবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং যখন আমরা জানব, আমরা জনসাধারণকে জানাব।

হিজবুল্লাহর সাথে এক বছরের সীমান্ত সংঘর্ষের পর ইসরাইলি আক্রমণ বেড়েই চলছে লেবাননে। গোষ্ঠীটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের প্রক্সিবাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র এবং গাজায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কাজ করছে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার বলেছে, দক্ষিণ লেবাননে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ভারি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর ছয় সেক্টর কমান্ডার এবং আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৫০ জন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে তারা ।

সাফিয়েদ্দিনের খোঁজে যে এলাকাটিতে তল্লাশি চালাবেন হিজবুল্লাহর সদস্যরা, তা দ্রুত সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ইসরাইল নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে সেখানে।

দাহিয়েহ অঞ্চলটি হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। এ কারণেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ২৭ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানি কুদস ফোর্সের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল আব্বাস নিলফোরোওশানকে এখানে হত্যা করে ইসরাইল।

এদিকে প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও সাফিয়েদ্দিনের অবস্থা নিয়ে হিজবুল্লাহ এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।